বিড়ির জন্য ১০ এমপির ডিও
তিন বছর আগে তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ঘোষণা অনুযায়ী এখন দেশ থেকে বিড়ি বিতাড়িত হওয়ার কথা থাকলেও আসছে বাজেটে বিড়ির ওপর শুল্ককর কমিয়ে এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে আধাসরকারি পত্র (ডিও) দিয়েছেন অন্তত ১০ সংসদ সদস্য। মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর উল্লেখ করে ২০১৬-১৭ অর্থবছরেই মুহিত বলেছিলেন, পরের দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশে বিড়ির ব্যবসা বন্ধ হবে। সাবেক অর্থমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর বাজেটে বিড়ির শুল্ককর কমাতে সংসদ সদস্যদের তৎপরতাও
তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমে যায়। নতুন সরকারে অর্থমন্ত্রী বদল হওয়ার পর প্রথম বাজেটের আগে আবারও বিড়ির পক্ষে তৎপর হয়ে উঠেছেন সংসদ সদস্যরা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিড়ির শুল্ককর কমাতে আবারও ডিও লিখছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে। শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের স্বার্থের কথা উল্লেখ করে বিড়ির কর কমাতে অন্তত ১০ সংসদ সদস্য ডিও লেটার দিয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বাংলাদেশে তামাকপণ্যের শতকরা ৮০ ভাগই বিড়ি ও কম দামের সিগারেট, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়। দেশ থেকে বিড়ির ব্যবসা বন্ধ করতে ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে গত তিন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে বিড়ির ওপর কর বাড়িয়েছেন মুহিত। ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই মুহিত বলেছিলেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে দেশে আর বিড়ি থাকবে না। আগে বিড়ির পক্ষে সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে অনেক চিঠি আসত, এবার দুই-একটা পেয়েছি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আসছে বাজেটের আগে অন্তত ১০ সংসদ সদস্য বিড়িশিল্পের কর কমানোর প্রস্তাব করে অর্থমন্ত্রীকে ডিও লেটার দিয়েছেন। বিড়িশিল্পের শ্রমিকদের কর্মসংস্থান রক্ষার স্বার্থে নামমাত্র কর বসিয়ে এ শিল্প টিকিয়ে রাখার পক্ষে লিখেছেন তারা। দেশের উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে বেশি বিড়ি উৎপাদিত হলেও ডিও পাঠানো সংসদ সদস্যদের বেশিরভাগই ঢাকা ও কুমিল্লা এলাকার।
অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, এবার বিড়ির শুল্ককর কমাতে ডিও দেওয়া সংসদ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন কুমিল্লা-৩ আসনের ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, কুমিল্লা-৭ আসনের অধ্যাপক আলী আশরাফ, ঢাকা-১৫ আসনের কাজী ফিরোজ রশীদ, রাজবাড়ী-১ আসনের কাজী কেরামত আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের আবদুস সাত্তার ভূঞা, ঢাকা-৩ আসনের হাবিবুর রহমান ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির। এ ছাড়া সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্যদের মধ্যে সেলিনা ইসলাম, কানিজ ফাতেমা আহমেদ ও জাকিয়া পারভীন বিড়িশিল্পের নিয়োজিত শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের কথা উল্লেখ করে শুল্ককর কমানোর প্রস্তাব করে ডিও লেটার দিয়েছেন। ডিও দেওয়া এক সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিড়ি যদিও স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ, তবুও এ শিল্পে বিপুল পরিমাণ শ্রমিক কাজ করে। তাদের কর্মসংস্থান রক্ষার স্বার্থে শ্রমিক-মালিকদের অনুরোধে ডিও লেটার দিতে হয়েছে। এটা দোষের কিছু নয়।
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পরিপ্রেক্ষিতেই তিন বছর আগে তখনকার অর্থমন্ত্রী দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে বিড়িমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
Source: Deshrupantor, 27 May 2019