তামাক কোম্পানির সাথে লামা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের গোপন বৈঠক
৯নভেম্বর ১৪ইং-বান্দরবানের সকল উপজেলায় পুরোদমে চলছে তামাক চাষের প্রস্তুতি। রবি শস্যের জমি দখল করে নিয়েছে তামাক চাষ। এই তামাক চাষকে কেন্দ্র করে সার পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে লামার কর্মরত তামাক কোম্পানি আবুল খায়ের টোবাকো, ঢাকা টোবাকো ইন্ডাট্রিজ ও বৃটিশ আমেরিকা টোবাকো কোম্পানি লিমিটেড। কৃষকরা জমিতে চাষ দিয়ে বীজতলা তৈরি করে তামাক চাষ করার জন্য জমিতে বেড তৈরি করে বসে আছে। প্রয়োজন সারের। এদিকে সরকার কর্তৃক তামাকের জন্য সারের বরাদ্দ না থাকায় তামাক কোম্পানিরা প্রশাসনকে লোভনীয় অফার দিয়ে বিসিআইসি ডিলারদের উপেক্ষা করে নিয়ম নীতিকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে নিজেরাই আমদানী করবে টিএসপি ও এসওপি সার এমনটা আবদার করে উপজেলা প্রশাসনের কাছে। পক্ষান্তরে স্থানীয় যেকোন সরকারী ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অনুদান দেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন মিটিংয়ে উপস্থিত আবুর খায়ের টোবাকো কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার আফজাল হোসেন।
রবিবার সকাল ১০টার সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এক গোপন বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সামশুন নাহার সুমি, শেখ মাহাবুবুর রহমান সহ-সভাপতি লামা উপজেলা আওয়ামীলীগ, বাথোয়াই চিং মার্মা চেয়ারম্যান, ১নং গজালিয়া ইউ.পি, মোঃ জহিরুল ইসলাম সাংগঠনিক সম্পাদক লামা উপজেলা আওয়ামীলীগ, মোঃ আফজাল এরিয়া ম্যানাজার আবুল খায়ের টোবাকো, মোঃ শাখাওয়াত হোসেন এরিয়া ম্যানাজার ঢাকা টোবাকো ইন্ডাট্রিজ লিঃ, মোঃ আবদুর রব উপজেলা ম্যানাজার আবুল খায়ের টোবাকো লামা, মোঃ শহীদুজ্জামান উপজেলা ম্যানাজার ঢাকা টোবাকো ইন্ডাট্রিজ লামা, মোঃ আব্দুল হামিদ উপজেলা ম্যানাজার ঢাকা টোবাকো ইন্ডাট্রিজ হরিণঝিরি ডিপো।
কৃষি অফিসের তথ্য মতে চলতি সময়ে রবি শস্যের জন্য আবাদ জমির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার হেক্টর। যার মধ্যে বোরো ধান ২ হাজার ৬ শত হেক্টর আর অন্যান্য সবজি ১ হাজার ৪ শত হেক্টর। যার বেশির ভাগ রবি শস্যের জমি ইতিমধ্যে তামাক চাষের জন্য প্রস্তুত করছে কৃষকরা। রবি শস্যের জন্য নভেম্বর/২০১৪ মাসে লামা কৃষি অফিস থেকে সারের যে চাহিদা চাওয়া হয়েছে তাতে ইউরিয়া ১৮০ মেঃ টন, টিএসপি ৮০ মেঃটন, এমওপি ৫০ মেঃ টন, ড্যাপ ২৫ মেঃ টন উল্লেখ রয়েছে। উক্ত প্রাপ্ত সারের অধিকাংশ সার অবৈধ ভাবে ব্যবহার হচ্ছে তামাক চাষে। সরকারের ভূর্তুকিকৃত সার কেন তামাক চাষে ব্যবহার হচ্ছে তার কোন সন্তোষজনক উত্তর মেলেনি কারো কাছে। কৃষকরা সার পেতে সহজলভ্য করার জন্য সরকার কর্তৃক করা হয়েছে কৃষি কার্ড। যা মানছে না, কোন বিসিআইসি ডিলার বা খুচরা ডিলাররা। এভাবে পার্বত্য অঞ্চলের সকল আবাদী জমি তামাক চাষের দখলে চলে গেলে সরকারের জলবায়ু ইস্যু ভেস্তে যাবে বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা।
২০০৭ সালে বান্দরবান জর্জ কোর্টে তামাক চাষ নিয়ে দায়ের করা বৈধতা রিটের রায় মতে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় সর্বমোট ১০ হাজার হেক্টর তামাক চাষ করতে পারবে বলে রায় দেয় জর্জকোর্ট। আদালতের এ রায়কে অমান্য করে শুধুমাত্র লামা উপজেলায় ৩টি তামাক কোম্পানী স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে তামাক চাষ করছে ১১ হাজার ৩ শত হেক্টর জমিতে।
গত বছর একই ভাবে অবৈধ সার আমদানী করায় আবুল খায়ের টোবাকো কোম্পানী লামা অফিসের গোডাউনকে সিলগালা করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকা টোবাকোতেও জব্দ করা হয় অবৈধ সার। পরবর্তীতে উপজেলা সার বীজ মনিটরিং কমিটির কাছে মুচলেখা দিয়ে ক্ষমা চায় টোবাকো কোম্পানীর প্রতিনিধিরা। যাতে তারা দোষ স্বীকার করে বলে, কোম্পানীগুলো আগামীতে সরকারের বিসিআইসি ডিলার ছাড়া নিজেরা কোন প্রকার সার আমদানি করবে না বলে স্বীকারোক্তি দেয়। তারপরও বর্তমান সময়ে তামাক কোম্পানীদের অবৈধ সার অনুপ্রবেশ নিয়ে দফায় দফায় করা গোপন বৈঠক অশুভ কিছু ইঙ্গিত করছে বলে মনে করেন এলাকার সুধীসমাজ। কোম্পানীগুলো কয়েকদিন যাবত নামে-বেনামে ও বিভিন্ন খুচরা ডিলারদের নাম ভাঙ্গিয়ে রাতের আধারে অবৈধ ইউরিয়া সার অনুপ্রবেশ করাচ্ছে বলে স্থানীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়। সুয়ালক- লামা ও চকরিয়া লামা রোড দিয়ে তাদের এই অবৈধ সার অনুপ্রবেশ করাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রোস্তম আলী সাথে কথা বললে তিনি বলেন, অতি শীঘ্রই কোম্পানীগুলোকে নজরদারীতে এনে তাদের অবৈধ সার অনুপ্রবেশ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তামাক চাষ রবি শস্যের চাষে কোন ধরনের বিদ্রুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারবে না বলে আশ্বস্ত করেন।
লামা থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ সিরাজুল ইসলাম সিটিনিউজ২৪.ডটকমকে বলেন, অবৈধ সার অনুপ্রবেশ বন্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সজাগ রয়েছে।
Source:সিটি নিউজ ২৪ ডটকম : November 9, 2014