আবুল খায়ের টোব্যাকো ( ৬ বছরে ৩৫ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি )

সিগারেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের টোব্যাকো ৩৫ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। বিগত ছয় বছর তামাক পাতার বিপরীতে উৎসে ভ্যাট পরিশোধ না করে এ ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ফাঁকি দেয়া ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দিতে ইতিমধ্যেই কুমিল্লা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট থেকে পৃথক তিনটি দাবিনামা জারি করা হয়েছে। এবারই প্রথম নয়, এর আগেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যান্ডরোল ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল। তখন কারখানা গেটে একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।

প্রাথমিক দাবিনামা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত রংপুরের টোব্যাকো পার্চেজ সেন্টার নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তামাক পাতা কেনে। কিন্তু এর বিপরীতে কোনো ভ্যাট পরিশোধ করেনি। ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ৯২ লাখ ৪৩ হাজার কেজি তামাক পাতা কেনে আবুল খায়ের টোব্যাকো, যার ক্রয়মূল্য ১২৭ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ৫ শতাংশ হারে উৎসে ভ্যাট আদায়ের বিধান থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি তা করেনি। এতে আলোচ্য সময়ে প্রায় পাঁচ কোটি ১০ লাখ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেনি। একইভাবে ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের

নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কোটি কেজি পাতা কেনা হয়। এর বিপরীতেও ভ্যাট পরিশোধ করেনি। এতে ২৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারি ভ্যাট অফিসে জমা দেয়া দাখিলপত্র পর্যালোচনা করে এ ভ্যাট উদঘাটন করেছে সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেট।

এ বিষয়ে জানতে আবুল খায়ের গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাইদ চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন ও এসএমএস করলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।

জানা গেছে, ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট আইনে দুটি তফসিল দেয়া আছে। এ তফসিলে তামাক পাতা নেই। এ হিসেবে তামাক পাতা ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ভ্যাট পরিশোধের নিয়ম আছে। কিন্তু অন্য একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তামাক পাতাকে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া আছে। এ জন্য সরবরাহকারীর কাছ থেকে মূসক-১১/১১ক নেয়ার বিধান আছে। তা না হলে জোগানদার সেবা হিসেবে গণ্য করা হয়। আর জোগানদার সেবার বিপরীতে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আবুল খায়ের টোব্যাকো মূলত দুটি ব্র্যান্ডের সিগারেট বাজারজাত করে। এগুলো হচ্ছে মেরিস, র‌্যালি। এর মধ্যে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে মেরিস ব্র্যান্ডের সিগারেট ব্যাপক সমাদৃত। বাজারে এর প্রচুর চাহিদা আছে। এ সিগারেট বিক্রিকে উৎসাহিত করতে খালি প্যাকেটের বিনিময়ে সিগারেট দেয়া হয়।

এর আগে ২০১৫ সালের জুন মাসে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নকল ব্যান্ডরোল ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। তখন এনবিআর থেকে ভ্যাট আইনের ধারা ২৬(খ)-এর উপধারা (১) অনুযায়ী কারখানায় রাজস্ব কর্মকর্তাদের পাহারা বসাতে সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেটকে নির্দেশ দিয়েছিল। একই সঙ্গে আবুল খায়ের টোব্যাকোর প্রতিটি সিগারেটের প্যাকেটের প্রকৃতি, শলাকা সংখ্যা, খুচরা মূল্য, সম্পূরক শুল্ক ও মূসক হার, অপচয় নির্ধারণ করতে বলা হয়েছিল। এ ছাড়া এনবিআর কোম্পানিটির জালিয়াতি ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট মূসক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সিগারেটের উৎপাদন থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ে বিতরণ পর্যন্ত পুরো কার্যক্রম তদারকি করতে নির্দেশ দিয়েছিল।

এ ছাড়া অবৈধ সম্পদ অর্জন, বিদেশে অর্থ পাচারসহ রাজস্ব আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানে আবুল খায়ের গ্রুপের তিন পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১৪ জানুয়ারি সকালে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিন পরিচালক হলেন- আবুল কাশেম, মো. আবু সাঈদ চৌধুরী ও শাহ শফিকুল ইসলাম।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, আবুল খায়ের গ্রুপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে মালিকদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বিদেশে অর্থ পাচার ও দেশের বাইরে বাড়ি তৈরির অভিযোগও রয়েছে।

Source: jugantor, 23 March, 2018

About Tobacco Industry Watch

House 6 (3rd Floor, East Side), Main Road 3, Block A, Section 11, Mirpur, Dhaka-1216
Tel: +88-02-9005553, Fax : +88-02-8060751,
URL : www.tobaccoindustrywatchbd.org, Skype ID: progga.bd

Email: progga.bd@gmail.com, info@tobaccoindustrywatchbd.org