স্পিকার চাইলেন আইনের প্রয়োগ, জেলা প্রশাসক বললেন- আইন দেখাবেন না
মঙ্গলবার সকালে সংসদ ভবনের শপথ রুমে তামাক কোম্পানির আগ্রাসন ঠেকাতে এক কর্মশালায় কথা বলছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অর্ধশতাধিক সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে তাদের তামাক বিরোধী অবস্থান নিতে আহ্বান জানান স্পিকার। ওদিকে একই সময়ে ঢাকা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বসেছিলো আরেক বৈঠক। সেখানে তামাক বিরোধী অভিযান চালাতে কি কি ব্যবস্থা নিতে হবে সে নিয়ে আলোচনা চলছিলো। তবে বিষ্ময়কর এই যে সেই বৈঠকে দেশের অন্যতম তামাক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাক্যো বাংলাদেশ (বিএটিবি) এর প্রতিনিধিও ছিলেন।
বিএটিবি’র প্রতিনিধি নিয়ে তামাক বিরোধী অভিযানের এই আলোচনা ব্যাপক সমালোচনার ঝড় তুলেছে। কিন্তু বিষয়টিতে মোটেই পাত্তা দিচ্ছেন না ঢাকা জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফ হারুন। এ ব্যাপারে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের নিষেধাজ্ঞাকেও পাশ কাটিয়ে ওই বৈঠকটি করেন তিনি।
মোবাইল কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে ওই সভায় ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানীর ব্যবস্থাপক শেখ শাভাব আহম্মেদ ও উর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
ধূমপান ও তামাকজাতদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের বড় কাজটি করে মোবাইল কোর্ট। আইনের ২ (ক) ধারা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেটদের তামাক নিয়ন্ত্রন আইন প্রয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী পাবলিক প্লেসে ধুমপানকারীকে দন্ডিত করার ক্ষমতাও রয়েছে মোবাইল কোর্টের। এছাড়াও আইনের ৬ থেকে ১০ নং ধারা লঙ্ঘনে দণ্ডও দেয় মোবাইল কোর্ট।
বিষয়টিতে ক্ষিপ্ত জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল।
এই সেলের কো-অর্ডিনেটর আমিন আল আহসান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে খবর আসে ঢাকা জেলা প্রশাসনের রুমে মোবাইল কোর্টের বিচারকদের নিয়ে বৈঠকে বিএটিবি’র প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। নিয়মানুযায়ী এটি হতে পারে না। আমরা তখনই বিষয়টি জানতে চাই।
তিনি বলেন, যেখানে মোবাইল কোর্টের দ্বায়িত্ব তামাক কোম্পানির আগ্রাসনকে হ্রাস করা, সেখানে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোকে নিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসকের বৈঠক হতে পারে না। আমরা বিষয়টি সর্ম্পকে ঢাকা জেলা প্রশাসকের সুস্পষ্ট ব্যাখা আশা করছি।
তামাক কোম্পানির ব্যাবসায়ীদের নিয়ে বসে ঐ বৈঠকে ‘অসাধু ব্যবসায়ী’দের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মোবাইল কোর্টের বিচারকদের কেমন নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফ হারুন, সে প্রশ্ন তোলেন সেলের সমন্বয়ক।
এদিকে জেলা প্রশাসকের বৈঠক সূত্র জানায়, তামাক কোম্পানির প্ররোচনায় সাধারণ ব্যবসায়ীদের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বিচারকদের পরামর্শ দেন তিনি।
বৈঠকে কুর্মিটোলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ এইচ এম আনোয়ার পাশা, র্যাব-১০ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ মো. ফরাদ হোসেন, র্যাব-৪ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আল আমীন, ডিএমপি’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা জেলার সকল সহকারী কমিশনার (ভূমি), কেরানীগঞ্জ, সাভার, ধামরাই, দোহার, নবাবগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ, ঢাকা সিটি দক্ষিণ কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ অতুল মন্ডল, ঢাকা সিটি উত্তর করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
আরো অংশ নেন, চেইন রিটেইল শপ আগোরা, মিনা বাজার ও স্বপ্ন’র উর্দ্ধতন কমকর্তা, বাংলাদেশ সুপার মার্কেট মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, বিএসটিআই’র সহকারী পরিচালক রিয়াজুল হক।
সম্প্রতি আইনের ৬ নং ধারা মতে বেশ কিছু সুপার স্টোরে অটোমেটিক ভেন্ডিং মেশিন জব্দ করে জরিমানা করে মোবাইল কোর্ট। এ প্রেক্ষিতে মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় প্রতিষ্ঠানের প্রতি সহনশীল হওয়ার অনুরোধ করেন।
তামাক কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়ে এমন একটি বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে জেলা প্রশাসক শেখ ইউসুফ হারুন উত্তেজিত হয়ে যান। আইনের প্রসঙ্গ টানলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আইন দেখাতে আসবেন না।
তামাক কোম্পানি বৈঠকে ছিলো, এতে সমস্যা কোথায়? আমি জানতে চাই, তাতে সমস্যার কি হয়েছে?’
আর জেলা প্রশাসক যখন বিষয়টিতে সমস্যাই দেখছিলেন না তখন সংসদ ভবনে জাতীয় সংসদের স্পিকার তার বক্তব্যে বলছিলেন, তামাক কোম্পানি বিভিন্ন অপকৌশলে তাদের পণ্যের বাজারজাত করছে। আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে এ অপকৌশল রুখতে হবে।
Source:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, মবিনুল ইসলাম ও মাজেদুল নয়ন,মে ২১, ২০১৪