লাল ফিতায় বন্দি ধূমপান বিধিমালা
তামাকে বছরে ৫৭ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়
আবু আলী
তামাকজনিত রোগে বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৫৭ হাজার মানুষ মারা যায়। আরও ৪ লাখ পঙ্গুত্ববরণ করে। তামাক ব্যবহারে আর্থিক ক্ষতি জিডিপির ৩ শতাংশের কাছাকাছি। তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয় এ খাতের আয়ের দ্বিগুণেরও বেশি। হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্স সেন্টার এবং ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো-ফ্রি কিডসের সর্বশেষ জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৪৩ শতাংশ তামাক সেবন করেন। তাদের মধ্যে ধূমপায়ী এবং চিবিয়ে খাওয়া তামাক সেবনকারী রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, বিধিমালা না হওয়ায় ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার আইন বাস্তবায়নে বিঘœ ঘটছে। এটা জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
জানা গেছে, আইন মন্ত্রণালয়ে আটকে গেছে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা। বিধিমালাটি চূড়ান্ত না হওয়ায় ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩’ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।
ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো ফ্রি কিডসের পরিচালক (প্রোগ্রাম বাংলাদেশ) তাইফুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, বিধিমালা না থাকায় আইনের ২-৩টি ধারা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না, যা দুঃখজনক। আমরা জেনেছি, অনেক আগেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় আটকে রেখেছে।
জানা গেছে, ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০১৩’ ভেটিংয়ের (পরীক্ষা-নিরীক্ষার) জন্য প্রায় এক বছর আগে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সিগারেট কোম্পানির পক্ষে বিধিমালায় শর্তযুক্ত করার প্রস্তাব দেয় আইন মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় তাদের পাঠানো প্রস্তাবই বহাল রাখতে বলে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিধিমালাটি দ্রুত ফেরত পাঠানোর তাগিদ দিয়ে চিঠিও পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরপর বিধিমালাটি আটকে গেছে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আইন মন্ত্রণালয় বিধিমালাটি ভেটিং করে তাদের না দিলে কিছু করার নেই। অনেক দিন আগে তারা বিধিমালাটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন পুরোপুরি বাস্তবায়নে তারা প্রস্তুত আছেন।
জানা গেছে, ২০০৫ সালের আইন সংশোধন করে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩’ গত বছরের ২৯ এপ্রিল জাতীয় সংসদে পাস হয়। আইন পাসের পর ওই বছরের ৩০ অক্টোবর খসড়া বিধিমালা মতামতের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। ওই বিধিমালায় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলকে সাংগঠনিক রূপ দেয়ার মাধ্যমে শক্তিশালী করার কথা বলা হয়। একই সঙ্গে আইনে থাকা তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র সতর্কবাণী মুদ্রণ, সিনেমা বা নাটকে ধূমপানের দৃশ্য দেখানোর নিয়ম, পাবলিক প্লেসের মালিকের দায়িত্ব, তামাকজাত দ্রব্য ধ্বংস ও বাজেয়াপ্তকরণের বিষয় স্পষ্ট করা হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্ব স্বাস্থ্য-২ শাখার এক কর্মকর্তা জানান, মতামত বিবেচনায় নিয়ে খসড়াটি চূড়ান্ত করতে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। লেজিসলেটিভ বিভাগ বিধিমালা কার্যকর হওয়ার পর তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সতর্কবাণী যুক্ত করার সময় ১৮ মাস করার প্রস্তাব দিয়ে বিধিমালার খসড়াটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ফেরত পাঠায়।
খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট, মোড়ক, কার্টন বা কৌটায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সরবরাহ করা রঙিন ছবি ও লেখাসংবলিত স্বাস্থ্য সতর্কবাণী অবিকল ছাপতে হবে। ছবি ও লেখার অনুপাত হবে ৬ : ১ এবং লেখাটি কালো জমিনের ওপর সাদা অক্ষরে হতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ ২ বছর পরপর ছবি ও সতর্কবাণী পুনর্মূল্যায়ন করে প্রয়োজনে নতুন ছবি ও সতর্কবাণী অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। সতর্কবাণীযুক্ত মোড়ক ছাড়া কোনো তামাকজাত দ্রব্য বাজারজাত বা বিক্রি করা যাবে না বলেও বলা হয়েছে খসড়া বিধিমালায়। প্রথম খসড়ায় সতর্কবাণী যুক্ত করার সময় ৬ মাস থাকলেও বিভিন্ন পক্ষের মতামত নেওয়ার জন্য তা বাড়িয়ে ৯ মাস করে খসড়া চূড়ান্ত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আইন মন্ত্রণালয় সতর্কবাণী যুক্ত করার সময় আরও ৯ মাস বাড়িয়ে ১৮ মাস করার প্রস্তাব দেয়। এ প্রস্তাব যুক্তিযুক্ত নয় মত দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় লেজিসলেটিভ বিভাগকে সতর্কবাণী যুক্ত করার সময় ৯ মাস বহাল রাখার জন্য বলে। কিন্তু এরপর কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও বিধিমালাটি আর ফেরত পাঠায়নি আইন মন্ত্রণালয়।
Source:Dainik amader shomoy,২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪