ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কি অপ্রতিরোধ্য?
জাকিয়া অাহমেদ॥
ব্রিটিশ অামেরিকান টোবাকো (বিএটি) কোম্পানি যেন দিনে দিনে অপ্রতিরোধ্য হয়ে যাচ্ছে। অাইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোম্পানিটি অবৈধ প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে অবাধে।
কনসার্ট ও বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার অাড়ালে চলছে তাদের বিভিন্ন ব্রান্ডের প্রমোশন। যা ধূমপানে তরুণদের উৎসাহিত করার প্রাণপন চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।
১৯ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির নতুন ব্র্যান্ড ‘বেনসন অ্যান্ড হেজেজ ফাইন কাট‘-এর প্রমোশনের জন্য ৬ দিন ব্যাপী এক কনসার্টের অায়োজন করা হয় বঙ্গবন্ধু অান্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। তবে গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রচার হলে কনসার্টটি তারা প্রথমে হরতালের কারণে স্থগিত হয়েছে বলে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানায়। কিন্তু হরতালের পরেও এ কনসার্ট তারা অার করেনি। তবে এখানেই থেমে নেই। এবার তারা অায়োজন করেছে নতুন এক ‘প্রতিযোগিতা‘র।
যদিও এ ধরনের ‘প্রতিযোগিতা‘ ২০০৪ সাল থেকেই করে অাসছে বিএটি। তবে বিএটি এটাকে ‘প্রতিযোগিতা‘ বললেও তামাক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যারা কাজ করেন তারা এটিকে মৃত্যু বিপণন প্রতিযোগিতা হিসেবে অভিহীত করেছেন। অথচ, দেশে বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) এর ৫(গ) ধারায় এ ধরনের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার বহন ও পুরস্কার প্রদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিএটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ অডিটোরিয়ামে ‘ব্যাটল অব মাইন্ড ২০১৪’ প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। এ বছরের স্লোগান, “Are you next in the Legacy of Leaders?”। ইতিমধ্যে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আহ্বানও জানানো হয়েছে যা অক্টোবরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত চলবে। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের এই http://batb.bdjobs.com/bom2014 ওয়েবসাইটে গিয়ে তাদের টুইটার ও লিঙ্কডইন একাউন্টের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করার জন্য বলা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অাইবিএ অডিটোরিয়ামে এ ধরনের অনুষ্ঠানের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে জানতে চাইলে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক অা অা ম স অারেফিন সিদ্দিকি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “অামি এ সম্পর্কে এখনও কিছু জানি না। অাইবিএ‘র পরিচালকের কাছে অাগে অামাকে খবর নিতে হবে। বুঝতে হবে বিষয়টা কী। তারপর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাববো। তাদের এ প্রতিযোগিতা অাইনের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ কিনা সেটাও দেখার বিষয়।”
তবে উপাচার্য আরও বলেন, “ব্রিটিশ অামেরিকান টোবাকো বাংলাদেশে কাজ করছে। তাদের অবশ্যই বাংলাদেশের অাইন মানতে হবে। অাইন মেনে তাদের কাজ করতে হবে। তাদেরকে নিয়মের মধ্যে না থাকলে হবে না।”
জাতীয় তামাকবিরোধী জোটের সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল অালম বাংলা ট্রিবিউনকে এ বিষয়ে বলেন, ধূমপান নিয়ন্ত্রণ অাইন অনুসারে সম্পূর্ণ বেঅাইনি কাজ করছে বিএটি। কারণ সিএসঅার (কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি)-এর নামেও কোনও তামাক কোম্পানি এ ধরনের কাজ করতে পারবে না। এটা অাইনে স্পষ্ট বলা অাছে। তার মানে বিএটি শুধু বিদ্যমান অাইনই নয়, রাষ্ট্রকেও অবজ্ঞা করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টেকনিক্যাল অফিসার ফর টোবাকো কন্ট্রোল ড. মাহুফুজুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে এ বিষয়ে বলেন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) অাইন সেটা সংশোধিত হয়েছে ২০১৩ সালে সেখানে বলা হয়েছে, তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার বা এর ব্যবহার উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে (কোনও কোম্পানি) কোনও দান, পুরস্কার, বৃত্তি প্রদান বা কোনও অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার (স্পন্সর) বহন করবে না, করাবেও না। এখন অামি মনে করি, বিএটি ‘ব্যাটল অব মাইন্ড ২০১৪‘ এর অাড়ালে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচারের চেষ্টা চালাচ্ছে যেটা বাংলাদেশের এই অাইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। একইসঙ্গে অামি এও মনে করি, টোবাকো কন্ট্রোল নিয়ে বাংলাদেশ সরকার যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোনও টেকনিক্যাল সহযোগিতা চায় তাহলে অবশ্যই অামরা তামাক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করবো।
অপরদিকে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল-এর সমন্বয়ক অামিন উল অাহসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “বিএটি ২০০৪ সাল থেকেই এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে অাসছে। তবে অামরা সাধারণত ওদের এ ধরনের অনুষ্ঠান হয়ে যাওয়ার পর জানতে পারি। এখন মিডিয়া অনেক সোচ্চার। মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর তৎপরতা ও সচেতনতার কারণে এখন অাগে থেকেই অামরা জানতে পারি। অামি বিএটির এই ব্যাটল অব মাইন্ড-এর কথা শুনেছি। তবে এর কিছু কাগজপত্রের জন্য অপেক্ষা করছি। অারেকটু বিশদ জেনে কাগজপত্র হাতে এলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবো।
বিএটি এর মাধ্যমে অাইনের কোনও কোনও ধারা লঙ্ঘন করছে সেটাও অাইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে হবে।”
অামিন উল অাহসান অারও বলেন, “টোবাকো নিয়ন্ত্রণে কাজ করার জন্য অাসলে শক্তিশালী জনবল এখনও অামাদের তৈরি হয়নি। অামরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করছি নির্দিষ্ট কিছু প্রজেক্টে। সম্পূর্ণভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে এমন প্রতিষ্ঠান অামাদের দরকার যাদের হাতে ক্ষমতা থাকবে। যারা তামাক নিয়ন্ত্রণে ‘লিগ্যাল অথরিটি‘ হিসেবেই কেবল কাজ করবে।”
অপরদিকে বরাবরের মতোই সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে গেছে বিএটি। তাদের অভ্যর্থনায় ফোন দিয়ে দুইবার জনসংযোগ কর্মকর্তাকে চাইলে ‘ফোনটি ট্রান্সফার করছি‘ বলা হলেও পরে কেউ ফোন ধরেনি। পরে সেখানে অাবার ফোন দিয়ে এই প্রতিবেদকের নাম্বারটি দিয়ে অনুরোধ করা হয় কথা বলার জন্য। কিন্তু কোনও ফোন না পাওয়ায় অাবার ফোন করা হলে সেখান থেকে জানানো হয় মিডিয়া দেখেন যে দুজন- অানোয়ারুল অামিন এবং ফয়েজ অালী উনারা কেউ অফিসে নেই। এদিকে ভবিষ্যৎ তরুণ প্রজন্মকে রক্ষায় ব্রিটিশ অামেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি)-এর বেঅাইনি প্রতিযোগিতা ‘ব্যাটল অব মাইন্ড ২০১৪‘ বন্ধ করার জন্য সরকারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা।
Source:বাংলা ট্রিবিউন,সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৪