উর্বরতা হারাচ্ছে জমি, উজাড় হচ্ছে বন ঝুঁকিতে মাতৃপ্রজনন স্বাস্থ্য
তামাক চাষ সম্প্র্রসারণে বহুজাতিক ও দেশি তামাক কোম্পানিগুলো সারা দেশে নানা ধরনের ক‚টকৌশল গ্রহণ করে থাকে। পার্বত্য জেলাগুলোতে কাঠের সুবিধা থাকায় সেখানে তামাক প্রক্রিয়াকরণে চুল্লিতে ব্যবহার করছে মূল্যবান কাঠ। স্থানীয়রা জানালেন, তামাক প্রক্রিয়া করতে যে চুল্লি তৈরি করা হয়েছে তাতে ব্যবহার করা হচ্ছে বান্দরবানের দামি কাঠ। প্রতি বছর হাজার হাজার মন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। জানা গেছে, কোম্পানিগুলো তামাক শুকানোর জন্য বান্দরবান জেলায় ৬ হাজারের ওপরে চুল্লি নির্মাণ করেছে।
পাথ, কানাডা পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের মোট বন উজাড়ের ৩১ শতাংশের জন্য দায়ী তামাক চাষ। গত মৌসুমে শুধু বান্দরবান জেলায় ৬ হাজারের বেশি চুল্লি নির্মাণ করা হয়েছে। কাঠ পোড়া হয়েছে ১ লাখ মণ। শুধু কাঠ পোড়ানোর কারণে নয়, তামাক এমন এক বিষ যার আশপাশে কোনো উদ্ভিদ জন্মায় না বলে মনে করেন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ড. মনসুর আলী। তিনি বলেন, যে জমিতে তামাক লাগানো হয় সেখানে অন্য কোনো ফসল তো দূরের কথা ঘাস পর্যন্ত জন্মায় না। এ কারণে তামাক উঠে যাওয়ার পর কোনো গবাদিপশু সেখানে খাদ্য আহরণে যায় না। এ কারণে তামাক চাষের এলাকায় নতুন করে গাছ না হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক চাষে মটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। মাটি ধারাবাহিকভাবে তার উর্বরতা হারায়। এছাড়াও তামাক চাষে তিন গুণ বেশি পরিমাণে ইউরিয়াও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। এক জমি দু থেকে তিন বার ব্যবহার করা যায় তামাক চাষে। যে জমিতে ভালো তামাক হয় সেখানে অন্য ফসলের আবাদ কমে যায়।
শাইখ সিরাজ জানান, তামাক চাষ জমির উর্বরতাকে নষ্ট করে ফেলে। এ কারণে পরবর্তীতে ওই জমিতে অন্য ফসল চাষ করা সম্ভব হয় না। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায় এবং পানির ধারণক্ষমতাও কমে যায়।
নারী ও শিশুরা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে : তামাক চাষের কারণে বান্দরবানের নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ছে। সন্তান প্রজননক্ষমতা হারাচ্ছে অনেক নারী। অকালে গর্ভপাত হচ্ছে বলেও ভয়াবহ তথ্য জানা গেছে। বান্দরবানের লামা উপজেলার মহিলা কমিশনার সুলতানা বেগম জানালেন, এ জেলায় শিশুদের মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত রোগের মাত্রা বেড়েই চলেছে। ফুসফুসের নানা সমস্যা নিয়ে মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
তিনি জানান, তামাক চাষ ও প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার ফলে অনেক নারী প্রজননক্ষমতা হারাচ্ছেন এবং অনেকের অসময়ে গর্ভপাত হচ্ছে। নারী উন্নয়ন কর্মী ও গবেষক ফরিদা আখতার বলেন, যেসব এলাকায় তামাক চাষ হচ্ছে সেখানে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারী ও শিশুরা। এই বিষ নারীর মধ্যে ভয়াবহ রোগ ছড়িয়ে দিচ্ছে। অকালে গর্ভপাতের মতো ঘটনাও ঘটছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্থানী চিকিৎসকরা জানান, তামাক পাতার বিকট গন্ধ ও থেকে নির্গত নিকোটিন মানব দেহে প্রবেশের ফলে অ্যাজমা, ক্যান্সারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বড়দের চেয়ে এসব রোগে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। প্রফেসর প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, তামাক উৎপাদন ও সেবনে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। এতে শরীরে কারসিনুজিন তৈরি হয়। আর ক্যান্সারের জন্য এই মানব দেহে একটি কারসিনুজিনই যথেষ্ট।
Source:Bhorerkagoj.Net,বুধবার, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫