তামাকের লোভের বলি কৃষিজমি
বেশি লাভের প্রলোভন, সরকারি তদারকির অভাব, তামাক চাষের ক্ষতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও জ্ঞান না থাকায় খাগড়াছড়ি জেলায় চাষিরা তামাক চাষের দিকে ঝুঁকছে। পার্বত্য এলাকার সবুজ পাহাড়ে এখন তামাকের বিষ।
জনসচেতনতা, অজ্ঞতা, সঠিক তথ্যের অভাব এবং কৃষি বিভাগের উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে গাফিলিতির কারণেই পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় তামাকের আবাদ বাড়ছে। এতে জেলায় আগের চেয়ে খাদ্য উৎপাদন কমেছে।
খাগড়াছড়িতে স’ানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কৃষকদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে পার্বত্য এলাকার কৃষি জমিতে ক্ষতিকর তামাক চাষ চলছেই।
তামাক চাষের চুল্লীতে বনকর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় পোড়ানো হচ্ছে হাজার হাজার টন মূল্যবান বনজ সম্পদ।
এক সময় তামাক চাষ শুধুমাত্র দীঘিনালা উপজেলায় সীমাবদ্ধ হলেও জেলার ৮টি উপজেলায় বিস্তৃত হয়েছে। তামাক প্রক্রিয়াজাত করণের জন্য নির্মিত শত শত ধুমঘর গুলোর আশ-পাশে স’প করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বনজ সম্পদ।
তামাক প্রক্রিয়াজাত করণের সময় এ সব ধুমঘর থেকে বের হয় বিষাক্ত ধোঁয়া। যা জনস্বাসে’্যর জন্য ক্ষতিকর।
স’ানীয় কৃষকরা জানায়, তামাক চাষের জন্য আগাম টাকা, সার কীটনাশকসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানি।
ফলে ক্ষতিকর জেনে ও লাভের জন্য তামাক চাষ করছে কৃষকরা। বিষাক্ত তামাক চাষের ফলে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন হুমকির মুখে পড়েছে, তেমনি ফসলের জমি হ্রাস পেয়ে খাদ্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তামাক চাষে জড়িয়ে পড়েছে শিশু শ্রমিক।
কৃষিবিদ আমিনুল ইসলাম বলেন, তামাক চাষের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানি। ফলে কৃষকেরা তামাক চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
চলতি বছরে জেলায় কত হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে এবং এর ফলে কত কোটি টাকার রবিশস্য কম হবে এমন প্রশ্নের জবাবে হাসিবুর রহমান বলেন, এখনও জরিপ চলছে।
দীঘিনালা পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি ও পলাশ বড়-য়া বলেন, তামাক পোড়ানোয় চলতি মৌসুমে উপজেলায় বন উজাড় এবং কাঠ পোড়ানোর এক বীভৎস মহোৎসব শুরু হয়। শুধু তাই নয়, বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি ও মার্চের প্রথম পক্ষে তামাকচুল্লীর ধোঁয়ায় পুরো এলাকার পরিবেশ বিরূপ হয়ে উঠে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কৃষি উন্নয়নকর্মী বিধান চাকমা বলেন, তামাক চাষে মাত্রাতিরিক্ত সালফেট অব পটাশ ব্যবহার হরা হয়। ফলে জমির অম্লতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। তাছাড়া নাইট্রোজেন-পটাশসহ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সার-কীটনাশক-বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে আশে-পাশের ছড়া-খাল ও জলাভূমিতে জলজ প্রাণির পাশাপাশি ছোট আকারের মাছও বিলুপ্ত হবার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক যুগল পদ দে, গত বছরের তুলনায় জেলায় তামাকচাষ কমেছে এমন দাবি করে বলেন, দীর্ঘদিন তামাক চাষের ফলে জমির উর্বরতা কমে যায়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-র চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পার্বত্য এলাকায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রয়োগ যথাযথভাবে ঘটছে না।
তিনি স’ানীয় কৃষি বিভাগ-বন বিভাগ এবং প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
দীঘিনালা উপজেলা স্বাস’্যকেন্দ্রের চিকিৎসকরা বলেন, তামাক চাষের মৌসুমে চামড়াজনিত রোগী যেমন বেশি আসে তেমনি পোড়ানোর সময় শ্বাসকষ্টজনিত রোগীই বেশি হয়।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি কৃষি বিভাগের অধীন। তবে চুল্লীতে কাঠ পোড়ানোর ঘটনা ঘটে থাকলে তা বনবিভাগ দেখবে।
Source:suprobhat.com,০৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৫