তামাকের চারা রোপণে শিশুশ্রমিক

একদল শিশু। সবার বয়স ১০ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে। কড়া রোদে তামাকের চারা রোপণে ব্যস্ত তারা। দম ফেলারও ফুরসত নেই। একের পর এক চারা রোপণ করে চলেছে। এই চিত্র কক্সবাজারের রামুর কচ্ছপিয়ার ডাক্তারঘাটা গ্রামের।
শুধু ডাক্তারকাটার নয়, রামুসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে তামাকখেতে কাজ করছে শিশুশ্রমিক। পরিবেশবাদী সংগঠনের হিসাবে এই সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি।
২ ফেব্রুয়ারি সকালে রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ডাক্তারকাটা গ্রামে গেলে কথা হয় তামাকখেতে নিয়োজিত শিশুশ্রমিক মোহাম্মদ ফারুকের (১২) সঙ্গে। সে জানায়, পাঁচ বছর ধরে বাবা তাদের সঙ্গে থাকে না। নতুন সংসার করছেন। ঘরে মা ও চার ভাইবোন রয়েছে তার। কাজ না করলে ওরা খেতে পায় না। তাই লেখাপড়া বাদ দিয়ে তামাকখেতে কাজ করছে।
আরেক শিশু সৈয়দ আমিন বলে, সকাল ছয়টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত তামাক চারা রোপণ করে শিশুরা মজুরি পায় ৬০ থেকে ১২০ টাকা। অথচ একজন পুরুষ পায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। কম টাকায় তামাকের চারা রোপণের জন্যই চাষিরা শিশুদের কাজে খাটাচ্ছে।
দেখা গেছে, ডাক্তারকাটা গ্রামের বাসিন্দা আবু তালেবের মালিকানাধীন এক একরের জমিতে তামাকের চারা রোপণ করছে ১৩ জন শিশু ও পাঁচজন নারী। চাষি আবুল কালামের জমিতে তামাকের চারা রোপণ করছে আরও ১১ জন শিশু। পাশের ইউনিয়ন গর্জনিয়াতেও একই অবস্থা। এখানেও শিশুদের দিয়ে তামাকের চারা রোপণ করানো হচ্ছে।
জানতে চাইলে স্থানীয় চাষি আবু তালেব (৪৫) জানান, তামাকের চারা রোপণের জন্য ঠিকমতো লোক পাওয়া যায় না বলে শিশুদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরী বলেন, গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরা টাকার জন্য তামাকের চারা রোপণ করছে। বহু শিশু বিদ্যালয়ের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে টাকার জন্য মাঠে নামে। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতন করা হলেও কাজ হচ্ছে না। তামাকের কারণে এলাকার বহু নারী-শিশু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজার সদর, চকরিয়া ও পেকুয়ার বিিভন্ন স্থানে তামাকখেতে শিশুদের দিয়ে চারা রোপণ করানো হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশীষ কুমার বলেন, ‘তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করার জন্য আমরা চাষিদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করছি। ফসলের জন্য বরাদ্দ সার, কীটনাশক যেন তামাকে ব্যবহার না হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখছি।’
পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আয়াছুর রহমান জানান, কক্সবাজার সদর, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও আলীকদম উপজেলায় বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার একর জমিতে তামাকের চাষ হচ্ছে। তামাক চাষে জড়িত রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। এর মধ্যে শিশু ২০ হাজার। জাতীয় শিশুশ্রম নীতি, ২০১১ অনুযায়ী ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুশ্রম দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু তামাক চাষের ক্ষেত্রে এই আইন অকার্যকর।
চিকিৎসকেরা জানান, তামাকখেতে নিয়োজিত শ্রমিকেরা নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অরূপ দত্ত বলেন, তামাক চাষ কিংবা প্রক্রিয়াজাতকরণে জড়িত যে কেউ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ ছাড়া ক্রনিক ব্রংকাইটিস, অ্যাজমা, হাঁপানিসহ নানা রোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

Source:prothom-alo.com,ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১

About Tobacco Industry Watch

House 6 (3rd Floor, East Side), Main Road 3, Block A, Section 11, Mirpur, Dhaka-1216
Tel: +88-02-9005553, Fax : +88-02-8060751,
URL : www.tobaccoindustrywatchbd.org, Skype ID: progga.bd

Email: progga.bd@gmail.com, info@tobaccoindustrywatchbd.org