বাড়ির আঙিনায় তামাকচুল্লি
কক্সবাজারের রামু উপজেলার দুর্গম ইউনিয়ন গর্জনিয়া। ইউনিয়নের ২৫ গ্রামে কয়েক বছর ধরেই চলছে তামাক চাষ। বেশির ভাগ বাড়ির আঙিনায় স্থাপন করা হয়েছে তামাক পোড়ানোর চুল্লি। বনের কাঠ পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে তামাক। তামাকের বিষাক্ত ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন এসব গ্রামের মানুষ।
তামাক চাষিরা জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ১২ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। তামাকপাতা পোড়ানোর জন্য খেতের পাশে কিংবা ঘরবাড়ির আঙিনায় তৈরি করা হয় অন্তত চার হাজার চুল্লি।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গর্জনিয়ার পূর্ব বোমাংখিল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে নারী-শিশুসহ অস্যংখ্য মানুষ খেত থেকে তামাকপাতা কাটছে। গ্রামের বাসিন্দা আমান উল্লাহ জানান, এক কানি জমিতে তামাক চাষ করলে ৭০-৮০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। আর ধান চাষ করলে লোকসান গুনতে হয়। তাই গ্রামের সবাই লাভের আশায় তামাক চাষ করছেন। তামাকপাতা পোড়ানোর বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঘরের আঙিনায় চুল্লি তৈরি করতে হয়েছে।
গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরী জানান, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বনাঞ্চলের কাঠ পুড়িয়ে চুল্লিতে তামাক উৎপাদন হওয়ায় এলাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।
রামুর চাকমারকুল ও ঈদগড় গ্রামের চাষি নজিবুল আলম ও সিরাজ মিয়া জানান, তামাকপাতা কাটার জন্য এখন শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এ কাজে নারী ও শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। পুরুষ শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৩৫০ টাকা। নারী-শিশুদের দিতে হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাইল আহমদ জানান, তাঁর এলাকায় পাঁচ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অসংখ্য বসতবাড়ির আঙিনায় চুল্লি স্থাপন করায় জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। অধিকাংশ চুল্লি থেকে নির্গত বিষাক্ত তামাকের রস বাঁকখালী নদীর পানিতে মিশে মাছসহ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।
কক্সবাজারের পরিবেশবাদী সংগঠন ‘কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলন’-এর সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী জানান, কক্সবাজার ও বান্দরবানের সাতটি উপজেলায় তামাকপাতা পোড়ানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে চার হাজারের বেশি চুল্লি।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অরূপ দত্ত জানান, তামাক চাষ ও বাড়ির আঙিনায় তামাক পোড়ানোর কারণে আলসার, ক্যানসার, হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। তামাক চাষ করে চাষিরা যে টাকা আয় করছেন, স্বাস্থ্যহানির বিপরীতে তার চেয়ে অনেক বেশি টাকা চিকিৎসা বাবদ খরচ করতে হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম জানান, জনস্বাস্থ্য ও এলাকার পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে তামাকচুল্লি উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। তিনি জানান, ইটভাটার মতো তামাকচুল্লি তৈরির ক্ষেত্রেও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক করার প্রক্রিয়া চলছে।
Source:prothom-alo,আপডেট: ০২:৪৯, মার্চ ০৫, ২০১৫