রংপুরে চাষিরা তামাক চাষে উৎসাহিত হয়ে পড়ছে
রংপুরে বিভিন্ন তামাকজাত কোম্পানির প্রলোভনে চাষের আগেই টাকা পেয়ে কৃষকরা এখন তামাক চাষে উৎসাহিত হয়ে পড়ছে। শস্য ভাণ্ডার খ্যাত রংপুরে ধান-আলুসহ অন্যান্য ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে তারা তামাক চাষের দিকে ঝুকছে।
রংপুরে চলতি মৌসুমে ধান ও ভুট্টার জমিতে ব্যাপকভাবে তামাক চাষ করা হচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে আলু, সরিষা, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বলে কৃষদের অভিযোগ।
রংপুর কৃষি অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রংপুর জেলায় চলতি মৌসুমে যেখানে পুরো জেলায় ইরি-বোরো ধান চাষ হয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে। সেখানে এবার তামাক চাষ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের তুলনায় ১০ হাজার হেক্টর বেশি জমি। পর পর দুই বছর আলু, গম আর ভুট্টা চাষ করে ভালো ফলন পেলেও উৎপাদনের খরচই তুলতে পারেনি কৃষকরা। এজন্য এবার তামাক চাষে আরো উৎসাহিত হয়েছে।
টানা অবরোধ-হরতালে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির নিশ্চয়তা না পেয়ে অধিক লাভের আশায় এবার রংপুর সদর, গঙ্গাচড়া, তারাগঞ্জ, বদরগজ্ঞসহ বেশ কিছু এলাকায় একরের পর একর জমিতে তামাক চাষ করেছে কৃষকরা।
তামাক চাষী ফজলার মিয়া বলেন, ‘বড় বড় তামাক কোম্পানিগুলো আগাম মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ায় এবং বিনা মূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক সরবরাহ করায় কৃষকরা তামাক চাষে উৎসাহী হয়ে পড়েছে। এক বিঘা জমিতে আলু বা সরিষা চাষ করলে যেখানে তিন হাজার টাকা লাভ হয়, সেখানে তামাক চাষে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ হয়। এ কারণে কৃষকরা তামাক চাষে ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়েছে।’
এ ছাড়া তামাক সরবরাহ করলেই সঙ্গে সঙ্গে টাকা দেওয়া হয়। আবার একসঙ্গে টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তায় তারা তামাক চাষকেই ঝুঁকিমুক্ত মনে করছেন বলে জানান ফজলার মিয়া।
রংপুর সদরের মোমিনপুর ইউনিয়নের তামাক চাষি জাফর হোসেন বলেন, ‘বেশ কয়েকবার আলু চাষ করে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে বিপাকে পড়েছি। এখন তামাক কোম্পানির আগাম টাকায় ঋণ পরিশোধ করে আরো অধিক মুনাফার আশায় কোম্পানির দেওয়া বীজ, সার ও সংরক্ষণের সামগ্রী দিয়ে তামাক চাষ করেছি।’
তবে তিনি অভিযোগ করেন, কৃষি বিভাগের কোনো কর্মকর্তাই তাকে কোনো সহযোগিতা করেনি। কোনো কৃষি অফিসার এসে বলেননি যে, জমিতে তামাক চাষ না করে অন্য কিছু চাষ করেন। বেশি লাভ হবে বা তামাকে জমির ক্ষতি হয়, এটা চাষ করা যাবে না।
কৃষি কর্মকর্তা আফজাল হোসেন স্বীকার করেন, তামাক কোম্পানিগুলো আগাম সার ও বীজসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করায় এবং অধিক লাভের আশায় কৃষকরা তামাক চাষে উৎসাহিত হচ্ছে। সরকার যদি তাদের মতো পরিকল্পনা গ্রহণ না করে তা হলে এটা রোধ করা কষ্ট সাধ্য হবে বলে জানান তিনি।
Source:১৮/০৩/২০১৫ ,http://bangla.jnewsbd.com/