বিদ্যালয় মাঠে তামাকের হাট
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিনটি বিদ্যালয়ের মাঠে বসানো হয়েছে তামাকের হাট। এতে খেলাধুলা ও শরীর কসরত থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে- আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি বহু-মুখি উচ্চ বিদ্যালয়, সাপ্টিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও লালমনিরহাট সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি বিদ্যালয়।
সোমবার ও শুক্রবার সপ্তাহের দুই দিন তামাকের এ হাট বসে বিদ্যালয় মাঠে। শুক্রবার ছুটির দিন হলেও সোমবার তামাকের বিরক্তিকর গন্ধে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয় যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
বিদ্যালয় মাঠ জুড়ে তামাকের হাট বসানোর কারণে খেলাধুলাই শুধু নয়, শারীরিক কসরতও করতে পারছে না প্রতিষ্ঠান তিনটির কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ফলে এসব শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশেও চরম ভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভয়াবহ ক্ষতির শিকার দৃষ্টি প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থীরা। তাদের বিদ্যালয় ও আবাসিক মাঠেই বসে এ হাট।
এছাড়াও তামাক পাতার বিরক্তিকর গন্ধে অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থী শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ কারণে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের সোমবার বিদ্যালয় পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে।
সাপ্টিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিন, জয়নব খাতুন, রেজিয়া, বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যালয় মাঠে তামাকের হাট বসানোর কারণে শুধু খেলাধুলাই বন্ধ হয়নি, তামাকের ধুলোর কারণে চোখ জ্বালা করে।
এছাড়াও তামাকের বিরক্তিকর গন্ধে ক্লাসে থাকতেও ইচ্ছে করে না। তাদের দাবি বিদ্যালয় মাঠ চাই।খেলাধুলার জন্য সর্বদাই উন্মুক্ত আর বিদ্যালয়ের পরিবেশ চাই শিক্ষা বান্ধব।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাপ্টিবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনের ছেলে জুয়েল ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৪ টাকায় সাপ্টিবাড়ি হাটের ইজারা নিয়েছেন।
হাটের নির্ধারিত স্থানে তামাকের এ হাট না বসিয়ে ক্ষমতার দাপটে বিদ্যালয় মাঠেই বসিয়েছেন। এ হাটে শুধু তামাকই নয়, বসে ধান,পশু-পাখি, বাঁশ, গম, ভুট্টাসহ বেশ কিছু পণ্যের পসরা। সকাল ৭টা থেকে দুপুর দেড়টা এবং বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দুই শিফটে হাট বসে।
বিগত বছরগুলোতে সাপ্টিবাড়ি হাটের নির্ধারিত স্থানেই বসানো হতো তামাকের হাট। কিন্তু সভাপতির ছেলেই ইজারাদার। তাই নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই তামাকের হাট চলে যায় বিদ্যালয় মাঠে এমনটা অভিযোগ স্থানীয় অভিভাবকদের।
সাপ্টিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রইচ উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষক মিলে বিদ্যালয় মাঠে হাট বসিয়ে কোমল মতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করছেন।
সাপ্টিবাড়ি বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ মো. তায়েজ উদ্দিন তাজু বাংলানিউজকে জানান, তামাক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিদ্যালয় মাঠে তামাকের হাট না বসানোর ব্যাপারে মিটিং আহ্বান করা হয়েছে। ম্যানেজিং কমিটি মিটিংয়ে যে সিদ্ধান্ত নিবে তাই হবে।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) জহুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কাজ বিদ্যালয় মাঠে করা আইনত দণ্ডণীয় অপরাধ। বিদ্যালয় মাঠে তামাক হাটের ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটিকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তারা(ম্যানেজিং কমিটি) ব্যবস্থা না নিলে উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে।
Source: banglanews24.com,এপ্রিল ২৩, ২০১৫