চাষে নীতিমালা নেই : হুমকিতে খাদ্য নিরাপত্তা

তামাক চাষ নিরুৎসাহিতকরণে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন নীতিমালা নেই। এমনকি নীতামালা তৈরিরও কোন উদ্যোগ নেই। বিচ্ছিন্নভাবে তামাক চাষে ঋণ প্রদান বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন, ভর্তুকি মূল্যের সার ব্যবহার বন্ধে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কিছু ক্ষুদ্র প্রয়াসেই সীমাবদ্ধ তামাক চাষ নিরুৎসাহিতকরণ কার্যক্রম। কিন্তু দুর্বল তদারকি এবং বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলোর ‘অদৃশ্য’ হস্তক্ষেপের কারণে এসব প্রচেষ্টা থেকে কোনো সুফল আসছে না। এতে প্রতিদিনই তামাক চাষ বেড়ে খাদ্য নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করেছে। খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক এখন দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় প্রধান হুমকি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রোকসানা কাদের বলেন, নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ১২ নম্বর ধারা অনুযায়ী তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে একটি নীতিমালার কথা বলা হয়েছে।
“ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে সভা হয়েছে; খুব শিগগিরই আরেকটি সভা অনুষ্ঠিত হবে”, বলেন রোকসানা কাদের।
তামাক চাষের ব্যাপকতা দিন দিন বাড়ছে। নতুন অঞ্চল যুক্ত হচ্ছে দেশের স্বার্থবিরোধী এই চাষাবাদের সঙ্গে। তামাকের সহজলভ্যতায় প্রতিদিনই দেশে ধূমপায়ীদের সংখ্যা বাড়ছে। নীতিমালা না থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো কৃষককে তামাক চাষে উৎসাহিত করছে। বাড়তি উৎপাদিত তামাক তুলে দিচ্ছে নতুন ধূমপায়ীদের হাতে।
পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, তামাক থেকে উৎপাদিত পণ্যের ভোক্তার সংখ্যা বেড়েই চলেছে, যা স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। তামাক থেকে সৃষ্ট নানা মরণঘাতী ও জটিল রোগের জন্য দেশের স্বাস্থ্য ব্যয় দিন দিন বেড়ইে চলেছে। “জনস্বাস্থ্য বিপন্ন করে তামাক কোম্পানিগুলো শত কোটি টাকা আয় করছে, অথচ এর দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে দেশের স্বাস্থ্য বাজেট থেকে”, বলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক পাতার বিকট গন্ধ ও এর থেকে নির্গত নিকোটিন মানব দেহে প্রবেশের ফলে অ্যাজমা, ক্যান্সারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বড়দের চেয়ে এসব রোগে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় বলা হয়, বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়াসহ তামাকজাত দ্রব্যে ডিডিটি, কার্বন মনোক্সাইড, আর্সেনিক, মিথানল, টার বা আলকাত্রা, নিকোটিনসহ ৪ হাজার এর বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যার মধ্যে ৪৩টি সরাসরি ক্যান্সার সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত। এদিকে দিনভর তামাকের দুর্গন্ধের মধ্যে থাকায় শ্বাসকষ্ট, গ্যাস্টিক, কোমর ব্যথা, মাথা ব্যথা, কাশি, হাপানি, চর্মরোগ, মহিলাদের গর্ভপাত, জন্ডিস ইত্যাদি দেখা দিচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে অন্যদিকে পরিবেশ বিপন্ন ও খ্যাদ্য ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, তামাক উৎপাদন থেকে সেবন পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। এতে শরীরে ২২ ধরনের কারসিনুজিন তৈরি হচ্ছে। আর ক্যান্সারের জন্য মানবদেহে একটি কারসিনুজিন তৈরিই যথেষ্ট। তামাক চাষের ক্ষতিকর প্রভাব এবং নিরুৎসাহিতকরণে গণমাধ্যম ও তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো একটি কার্যকর নীতিমালা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসলেও এর বাস্তবায়ন হয়নি।
২০১৩ সালে সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধি গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে গত ১৫ মার্চ। বিধির ১২ ধারায়Ñ তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন ও এর ব্যবহার ক্রমাগত নিরুৎসাহিত করতে উদ্বুদ্ধ এবং তামাকজাত সামগ্রীর শিল্প স্থাপন, তামাক জাতীয় ফসল উৎপাদন ও চাষ নিরুৎসাহিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারবে বলে উল্লেখ রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে তামাকচাষে কোন নীতিমালা না থাকায় তামাক কোম্পানিগুলো আগ্রাসীভাবে সারাদেশ বিষাক্ত তামাক চাষ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়িয়ে ফেলেছে। এতে গোটা অর্থনীতি বিশেষ করেÑ খাদ্য নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য, বনজসম্পদ, পরিবেশ-প্রতিবেশ, মাটির স্বাস্থ্য প্রভৃতি পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছে।
তামাক চাষে আর্থ-সামাজিক, পরিবেশ, প্রতিবেশ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ নানাবিধ ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। কিছু ক্ষতিকর প্রভাব তাৎক্ষণিক চোখে পড়লেও কিছু দীর্ঘদিন বা বংশপরম্পরায় দেখা যায়। এছাড়া প্রতিদিন তামাক চাষ বাড়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচলিত আবাদ কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশে একসময় খাদ্যাভাব দেখা দিবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সূত্র অনুযায়ী, দেশে ২০১৪ সালে ১ লাখ ৮ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। যা আগের বছর (২০১৩ সালে) ছিল ৭০ হাজার হেক্টর। তথ্যানুযায়ী, এক বছরেই ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এ পরিসংখ্যান পুরোপুরি সঠিক নয়; বাস্তবে তামাক চাষের জমির পরিমাণ আরও বেশি। পরিসংখ্যানে শুধুমাত্র তামাক চাষের ঘাটি কুষ্টিয়া, বান্দরবান, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুরের আবাদকৃত জমি থেকে তৈরি করা। তাই আবাদি জমি নিয়ে রয়েছে বিভ্রান্তি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তামাক কোম্পানির কূটকৌশলে কম দেখানো হচ্ছে। অন্যান্য অঞ্চল-মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, নাটোর (চলনবিল), নড়াইল, যশোর ও পার্বত্য জেলাসহ কয়েকটি এলাকায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তামাক চাষ হলেও তা হিসাব ধরা হয়নি। এ ধারা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা।
কৃষি অর্থনীতিবিদ মাহবুব হোসেন বলেন, প্রতি বছর আমাদের দেশের জনসংখ্যায় ১৮ লাখ নতুন মুখ যোগ হচ্ছে, তাই এটি ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তায় সঙ্কট তৈরি করতে পারে। একটি বেসরকারি সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক আবাদের কারণে পার্বত্য এলাকায় ধানের উৎপাদন কমেছে গড়ে প্রায় তিন লাখ টন। কমেছে আরো ২৩ ধরনের ফসলের উৎপাদন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৬-০৭ সালে দেশে তামাক চাষের মোট জমি ও উৎপাদিত তামাকের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩০ হাজার ৬৯৯ দশমিক ৪৫ হেক্টর ও ৩৯ হাজার ১৮০ মেট্রিক টন। ২০১০-১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৪৮ হাজার ৮৬৭ দশমিক ৪১ হেক্টর ও ৭৯ হাজার ২৩৪ মেট্রিক টন। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে তামাক চাষের জমি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ২০১০ সালের ৪৮ হাজার ৮৬৭ দশমিক ৪১ হেক্টর জমি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৪ সালে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার হেক্টর। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে তামাক চাষ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
তামাক চাষ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে জানা যায়, বহুজাতিক ও দেশীয় তামাক কোম্পানিগুলো সারাদেশে নানাবিধ কূটকৌশল ও আগ্রাসন। আর এ কৌশল এলাকাভেদে ভিন্ন। পার্বত্য জেলাগুলোতে কাঠের সুবিধা থাকায় সেখানে তারা চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে চালাচ্ছে বন উজাড়ের আগ্রাসন। এটাকে মুছে দিতে আবার তারা ওই এলাকায় বনায়ন কর্মসূচিও চালিয়ে দেশপ্রেমিক বনে যাচ্ছে। অপরদিকে উত্তরাঞ্চলে ভিন্ন চিত্র। এখানে রোদে শুকিয়ে গুদামজাত করা হয় তামাক পাতা। কাঠ পোড়ানো না হলেও পরিবেশ দূষণ থেমে নেই। এখানে এক ধরনের চুল্লি বানিয়ে তামাক পাতা শুকানো হচ্ছে।
এ সব এলাকায় তামাক কোম্পানিগুলোর চোখ উর্বরা খাদ্যশস্যের জমি ও দরিদ্র কৃষক। পাশাপাশি কৃষি বিভাগের সকল সুবিধা (সেচ, সার ও বিদ্যুৎ) ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকদের তামাক চাষে আকৃষ্ট করা হচ্ছে। এভাবে খাদ্য-শস্য উৎপাদনের ঘাঁটি বলে পরিচিত উত্তরবঙ্গকে তামাক চাষের ঘাটিতে পরিণত করার প্রচেষ্টা চলছে।
এছাড়া কৃষকের আবাদকৃত তামাক উচ্চমূল্যে ক্রয় করাসহ লোভনীয় সুবিধা প্রদান করায় চাষীরা লোভে পড়ে তামাক চাষে জড়িয়ে পড়ছে। তামাক চাষে কৃষকদের নগদ অর্থ সহায়তা, উপকরণ (সার, বীজ ও কীটনাশক) সহায়তা ও আইপিএম ক্লাবের মাধ্যমে তামাক চাষের উন্নততর প্রশিক্ষণ, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে সরকারি ভর্তুকি ও সেচের পানি তামাক চাষে ব্যবহার এবং সিএসআর (কর্পোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি) প্রকল্পের মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ চাষীদের সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে তামাক চাষের বিস্তার ঘটাচ্ছে।
দেশব্যাপী তামাক চাষের বিস্তার বাড়ায় ফসলি জমে কমে যাচ্ছে। যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। পাশপাশি তামাক চাষে মাটির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় উর্বরাশক্তি নষ্ট হচ্ছে। কৃষিবীদদের মতে, ধানের চেয়ে তামাক চাষে তিনগুণ বেশি ইউরিয়া ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। তামাক চাষের জন্য একটি জমি ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করা যায়। এরপর এই জমিতে তামাকের ফলনও যেমন ভালো হয় না, তেমনি অন্যান্য ফসলের ফলনও ব্যাপকহারে কমে যায়। অধিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারে ধীরে ধীরে মাটির স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যায়। কৃষিবীদ শাইখ সিরাজ বলেছেন, তামাক চাষ জমির উর্বরতাকে নষ্ট করে ফেলে। এ কারণে পরবর্তীতে ওই জমিতে অন্য ফসল চাষ করা সম্ভব হয় না।
খাদ্যমন্ত্রী মো. কামরুল ইসলাম বলেছেন, যেসব এলাকায় তামাক চাষ হয়, সেখানে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করে হলেও তামাকের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। পশাপাশি বিকল্প ফসল বিক্রির জন্য একটি শক্তিশালী বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলেন, খাদ্যমন্ত্রী।
তামাক চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কাজে মজুরি বেশি হওয়ায় কৃষকরা তাদের পরিবারের নারী, শিশু ও কিশোরদের ব্যবহার করে। ফলে দেশব্যাপী হাজার হাজার নারী, শিশু ও কিশোর ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে জীবনযাপন করছে। বিশেষ করে কাঁচা তামাক জ্বালিয়ে পরিশোধনের সময় গ্যাস বা ধোঁয়া চাষিদের স্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি। দীর্ঘদিন তামাক চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে যুক্ত থাকার কারণে ক্যান্সারসহ পেট, বুক ও ঘাড় ব্যথা এবং অনেক নারী শ্রমিক পায়ে ব্যথা ও প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হয়। শিশু-কিশোররা গ্রিন টোব্যাকো সিনড্রোম রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এছাড়া তামাক চাষের এলাকায় অধিকাংশ শিশু-কিশোর তামাক চাষ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত থাকে। এতে তামাক চাষ মৌসুমে স্কুলে যেতে পারে না তারা। তাই শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার শিশু-কিশোররা।
আর তামাকের কারণে অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসার পেছনে সরকারের প্রতি বছরে ব্যয় হচ্ছে ১১ হাজার কোটি টাকা। এ খাত থেকে সরকার রাজস্ব পাচ্ছে সাত হাজার কোটি টাকা। বাড়তি চার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হয় অন্যখাত থেকে এনে।
শুধু স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও মাটির ক্ষতি নয়; পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতি করছে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য। তামাক পোড়ানোর জন্য জ্বালানির প্রয়োজন মেটাতে হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। এতে তামাক চাষের এলাকা বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ছে।
তামাক চাষ এলাকার শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ শাক-সবজি অন্য এলাকা থেকে আমদানি করতে হয়। এছাড়া তামাক চাষের কারণে গো-খাদ্য না থাকায় ওই এলাকায় গবাদি পশু কমে যাচ্ছে। এলাকার মানুষের মধ্যে দুধ, ডিম ও মাংসসহ পুষ্টিকর খাবারের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এলাকার মানুষ মারাত্মক পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ-এর তামাক ও দরিদ্রতা শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়, যদি পরিবারের কর্তারা তামাকের জন্য ব্যয় করা অর্থের ৬৯ ভাগ খাদ্যের জন্য ব্যয় করে তাহলে দেশে অপুষ্টিজনিত মৃত্যু অর্ধেক কমে যাবে।
তামাক কোম্পানিগুলো চাষীদের বর্তমান দরিদ্র্যতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছুটা লোভের ফাঁদে ফেলে ওই এলাকার মানুষকে আজীবনের জন্য ধ্বংস করে দিচ্ছে। এছাড়াও জানা যায়, বিদেশি তামাক কোম্পানিগুলো নিজ দেশে তামাক চাষ বা সিগারেটের উৎপাদন করছে না। তারা নিজেদের দেশের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার মান ঠিক রেখে বাংলাদেশের মতো উন্নয়ন দেশেগুলোর দরিদ্রতা দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে একদিকে যেমন লাভবান হচ্ছেÑ তেমনি অন্যদিকে আজীবনের জন্য তাদের প্রতি নির্ভরশীল করে তুলছে। এর মাধ্যমে মুনাফালোভী সিগারেট কোম্পানিগুলো লাভবান হলেও বিপন্ন হচ্ছে গণমানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের।
প্রফেসর ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, প্রতিদিন তামাক চাষ যেভাবে বাড়ছে তাতে এককভাবে কোন সরকারি সংস্থা বা মন্ত্রণালয় এমনকি সরকারের সকল মন্ত্রণালয় কাজ করলেও এই আগ্রাসন থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। তিনি তামাক চাষের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। অন্যথায় এই আগ্রাসন থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। পাশপাশি উন্নত প্রযুক্তি সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে চাষীদের বিকল্প ফসল চাষে উৎসাহিত করতে হবে বলে উল্লেখ করেন।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা’র মতে, নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন যত দ্রুত করা সম্ভব হবে ততটাই স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশের হুমকি থেকে কৃষক ও সাধারণ মানুষ রক্ষা পাবে।

Source: Dailyinqilab,26-04-2015

About Tobacco Industry Watch

House 6 (3rd Floor, East Side), Main Road 3, Block A, Section 11, Mirpur, Dhaka-1216
Tel: +88-02-9005553, Fax : +88-02-8060751,
URL : www.tobaccoindustrywatchbd.org, Skype ID: progga.bd

Email: progga.bd@gmail.com, info@tobaccoindustrywatchbd.org