বান্দরবানে তামাক নিয়ে বিপাকে চাষি
বান্দরবানে তামাক নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। কোম্পানির তালিকাভুক্ত চাষির কাছ থেকে তামাক না কেনা ও কম দাম দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কোম্পানিগুলোর ক্রয়কেন্দ্রগুলোতে তামাক বিক্রি করতে আসা হতাশ চাষিদের ভিড় দেখা গেছে। চাষিরা বলেছেন, এ বছর শিলাবৃষ্টি ও সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় এমনিতে তামাক উৎপাদন কম হয়েছে। এখন কম উৎপাদিত তামাকগুলোও কোম্পানি পুরোপুরি কিনছে না। তার ওপর দাম দিচ্ছে কম। ফলে থানচি, রুমা, রোয়াংছড়ি ও বান্দরবান সদর উপজেলার চাষিদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
চাষিরা জানান, আবুল খায়ের লিফ টোব্যাকো নামে একটি কোম্পানি কোনো কারণ ছাড়া তামাক কেনা বন্ধ করে দেওয়ায় ওই কোম্পানির তালিকাভুক্ত চাষিরা সংকটে পড়েছেন। তামাক বিক্রি করতে না পেরে অনেকে দেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। কেউ কেউ বিক্রি করতে না পেরে ক্ষোভে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছেন তামাক।
নতুন সাঙ্গু সেতুসংলগ্ন আবুল খায়ের লিফের ক্রয়কেন্দ্রে কথা হয় রাঙ্গুনিয়ার দুধপুকুরিয়ার খোরশেদ আলম, রোয়াংছড়ির বেতছড়ার উবামং মারমা ও মেপোপাড়ার মংবু মারমার সঙ্গে। তাঁরা জানান, কোম্পানির তালিকাভুক্ত চাষি হিসেবে তামাক চাষ করেছেন। কিন্তু কোম্পানি তামাক কেনা বন্ধ করে দেওয়ায় তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এই ক্রয়কেন্দ্রের পাশের ব্যবসায়ী আহমদ নবী জানান, আবুল খায়ের লিফের চাষিদের দুরবস্থা দেখে তিনি তামাক রাখার জন্য দোকানের একাংশ খুলে দিয়েছেন। কিন্তু এতেও জায়গা না হওয়ায় অনেক চাষির তামাক বাড়িতে ফেরত নেওয়ার সামর্থ্য না থাকায় ক্ষোভে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছেন।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে আবুল খায়ের লিফের জেলা কার্যালয়ে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। কার্যালয়টিতে তালা ঝুলছে। মুঠোফোনে কোম্পানির হিসাবরক্ষক জয়নাল আবেদিন বলেন, চাষিরা নিজের চাষের বাইরে অন্যদের কাছ থেকেও তামাক নিয়ে এসেছেন। এ জন্য তঁাদের তামাক নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি দাবি করেন, চাষিদের সঙ্গে তাঁরা প্রতারণা করেননি, বরং কোম্পানি চাষিদের কাছে প্রতারিত হয়েছে।
এদিকে বালাঘাটায় ঢাকা টোব্যাকোর ক্রয়কেন্দ্রে হাংসামা পাড়ার শৈক্যসিং মারমার ১৫ বেল (এক বেল ৭০ কেজি) থেকে আট ও মংয়েচিং মারমার ১০ বেল থেকে আট বেল পাতা কোম্পানি নিয়েছে। অবশিষ্ট বেলগুলো কেন নেওয়া হলো না, তাঁদের কোনো কিছুই জানানো হয়নি।
আরেক চাষি মংথোয়াই উ মিচিং মারমা জানান, তাঁদের তামাক খারাপ শ্রেণিতে ফেলে দিয়ে ৭০ থেকে ১১৫ টাকা দাম দেওয়া হয়েছে। অথচ তঁার তামাকের পাতা ১৪৬ টাকা মানের। কিন্তু কোম্পানির নিবন্ধিত চাষি হিসেবে দরদাম করার কোনো সুযোগ নেই।
জানতে চাইলে দাম কম দেওয়ার কথা অস্বীকার করে ঢাকা টোব্যাকোর আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক কাউসার খান বলেন, চাষিদের উৎপাদিত তামাক সংগ্রহ না হওয়া পর্যন্ত ক্রয় চলবে। তিনি আরও বলেন, তামাক কেনা বন্ধ করে ভালো হয়নি। এখন অন্য কোম্পানিগুলোকেও তামাক কেনা বন্ধের দায় নিতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আলতাফ হোসেন জানান, এবার বান্দরবানে ২ হাজার ৭৩৯ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। তঁারা চাষিদের প্রতারিত হওয়ার কথা শুনেছেন। কিন্তু কৃষি বিভাগের বিরোধিতা সত্ত্বেও চাষিরা তামাক চাষ করায় প্রতারিত হলেও তাঁরা অভিযোগ নিয়ে আসেন না। প্রতারিত চাষিদের আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
Source: prothom-alo.com,24 may, 2015