কোম্পানির প্রভাবে প্রত্যাশিত কর বাড়েনি তামাক পণ্যে
তামাক কোম্পানিগুলোর অপতৎপরতা ও প্রভাবের কারণে এবারের বাজেটে তামাক পণ্যে কর বাড়েনি। বাজেট বক্তব্যে খোদ অর্থমন্ত্রী তামাক পণ্যের কারণে স্বাস্থ্য ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করলেও বাজেটে তার কোনো প্রতিফলন নেই।
তামাক কোম্পানিগুলো অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে প্রাক-বৈঠক করে যে কর হার নির্ধারণ করে দেয়, সেভাবেই কর বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তামাকবিরোধীরা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, তামাক পণ্যের কর বসানোর ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর কোনো প্রভাব নেই। বরং আমরা জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিয়ে কর বসিয়েছি। এ ক্ষেত্রে আইনে যা আছে তা করা হয়েছে। আমরা মনে করি যারা তামাক পণ্য গ্রহণ করে তারা আমাদের জনগণ। বেশি করে কর বসিয়ে এবং তাদের মটিভেট করে তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনব।
তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর কোম্পানির কোনো প্রভাব নেই।
এদিকে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা প্রজ্ঞা বলছে, বিড়ি ও কম দামি সিগারেটে সামান্য কর বাড়ানো হলেও ধোঁয়াবিহীন তামাকে করারোপ করা হয়নি। দাবি সিগারেটের কর প্রায় অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
গত বছরের তুলনায় এ বছরে মানুষের আয় বাড়ার কারণে দামি সিগারেট আগের চেয়ে সস্তা হয়ে গেছে। এবারের বাজেটে বড় কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছে সংস্থাটি।
তামাকবিরোধীরা অভিযোগ করে বলছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর তামাক কোম্পানিগুলোর প্রবল প্রভাব এবং তামাকবিরোধীদের দুর্বল প্রচেষ্টার কারণে এবারের বাজেটে উল্লেখযোগ্য হারে কর বাড়েনি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাজেট ঘোষণার আগে ও পরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) লঙ্ঘন করে গোপন সভা এবং প্রস্তাবনা পেশ করেছে তামাক কোম্পাানগুলো। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কয়েক দফা পৃথক পৃথক বৈঠক করেছে কোম্পানির প্রতিনিধিরা।
তামাকবিরোধীরা জানান, বাজেটে তামাক পণ্যে করারোপের ক্ষেত্রে তামাকবিরোধীরা অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার আরো বেশি সংগঠিত উদ্যোগ গ্রহণ করলেও শেষ পর্যন্ত সফলতা আসেনি। বরং তামাক কোম্পানি কর আরোপের ক্ষেত্রে জটিল সব প্রথা অবলম্বনে সরকারকে প্রভাবিত করে তামাক নিয়ন্ত্রণের পথ আরো কঠিন করে তুলেছে।
তারা জানান, চলতি অর্থবছরে তামাক পণ্যে উচ্চ হারে কর বসানোর দাবি জানিয়ে ১৯৭ জন সংসদ সদস্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন, যা তামাকবিরোধীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। এই ঘটনা বাংলাদেশে প্রথম বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও গত ২৮ জুন সংসদে এ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য।
তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রচেষ্টা আছে জানিয়ে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০১১ সালে জাতিসংঘের একটি ভাষণেও বলেছেন, তামাকের ওপর উচ্চ হারে কর আরোপ করতে হবে।
Source: bhorerkagoj,24-08-2015