স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ নীতিমালার অভাবে কাজে লাগছে না
নীতিমালার অভাবে কাজে আসছে না স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে প্রথমবারের মতো সরকার তামাক খাতে সারচার্জ আরোপ করলেও সেটির ব্যবহার হয়নি এখনো। এ সময়ে তামাক খাত থেকে আদায় হওয়া রাজস্ব থেকে ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বাবদ আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হওয়ার কথা। যদিও অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জের জন্য নির্ধারিত অর্থনৈতিক কোড ২২১২-তে জমা পড়েছে মাত্র ২ কোটি টাকা। বাকি টাকা আদায় হলেও সংশ্লিষ্টদের চোখ এড়িয়ে বিবিধ কোডে জমা পড়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, সারচার্জ থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন) একটি ‘ন্যাশনাল টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’ পরিচালনা করতে পারে, যা দেশের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত কর্মসূচি (গবেষণা ও প্রচারাভিযান) বাস্তবায়ন, নিকোটিন আসক্তদের আসক্তিমুক্ত করার কর্মসূচি বাস্তবায়ন, তামাক চাষে নিয়োজিত কৃষক এবং তামাকপণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের কর্মসূচি বাস্তবায়ন কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) টেকনিক্যাল অফিসার ড. সৈয়দ মাহফুজুল হক আমাদের সময়কে বলেন, নীতিমালার অভাবে সারচার্জের টাকা ব্যয় করা যাচ্ছে না। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কাজ করছে। নীতিমালা তৈরি হলে সারচার্জের আদায়কৃত টাকার সুফল পাওয়া যাবে।
জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সারচার্জ থেকে অর্জিত অর্থ ‘তামাক ব্যবহারজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে’ ব্যয় করা হবে। কিন্তু সারচার্জের অর্থ ব্যবহারে সুনির্দিষ্ট কোনো বিধিমালা না হওয়ায় আদায়কৃত সামান্য অর্থটুকুও অব্যবহৃত পড়ে আছে। ফলে সরকার প্রশংসামূলক একটি উদ্যোগ নিলেও তার সুফল মিলছে না। তবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে সারচার্জের অর্থ কী কী কাজে ব্যয় করা যেতে পারে, তা নিরূপণের লক্ষ্যে কাজ করছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের প্রোগ্রাম অফিসার মীর নবীন একরাম আমাদের সময়কে বলেন, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ থেকে আদায়কৃত অর্থ সময়োপযোগী, বাস্তবসম্মত, বিশেষ করে তামাক নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট কাজে কীভাবে ব্যবহার করা যায় এবং কোন খাতে ব্যবহার করা যায়, সেজন্য খাত নির্ধারণে কমিটি কাজ করছে। আট সদস্যের এ কমিটি শিগগির একটি নীতিমালা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
জানা গেছে, তামাকবিরোধীদের নিয়মিত আন্দোলন ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার গত ২০১৪-১৫ বাজেটে তামাকপণ্যে ১ শতাংশ হারে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আরোপ করে। পরবর্তীকালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ‘স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আদায় বিধিমালা ২০১৪’ প্রণয়ন করে। বিধিমালায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আমদানিকৃত ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত তামাকজাত পণ্যের ওপর মূল্যভিত্তিক এই সারচার্জ আরোপযোগ্য হবে। বিধিমালায় আরও বলা হয়, আমদানিকৃত তামাকজাত পণ্যের ক্ষেত্রে যে মূল্যের ভিত্তিতে মূল্য সংযোজন কর নিরূপণ করা হয়, সেই মূল্যের ওপর সারচার্জ প্রদেয় হবে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত তামাকজাত পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে, উৎপাদন স্তরে মূসক আইনের ধারা ৫-এর উপধারা ২-এর অধীন ঘোষিত মূল্য সংযোজন কর আরোপযোগ্য মূল্যের ওপর সারচার্জ প্রদেয় হবে। বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ বিধান লঙ্ঘন করলে তা মূসক আইনের অধীন একটি অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং এমন অপরাধের ক্ষেত্রে মূসক আইন ও প্রণীত বিধিমালা অনুসারে দ- আরোপণীয় হবে এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, মূসক আইনে ১৯৯১-এর ধারা ৫৬ অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। কিন্তু এই সারচার্জের অর্থ কোন কোন খাতে ব্যয় হবে সে বিষয়ে কোনো নীতিমালা না থাকায় আদায়কৃত দুই কোটি টাকা পড়ে আছে।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে আরোপিত এক প্রকার শুল্ক যা সাধারণত জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য, যেমনÑ তামাক, অ্যালকোহল ইত্যাদির ওপর আরোপ করা হয়ে থাকে। এ ধরনের শুল্ককে ‘সিন ট্যাক্স’ নামেও অভিহিত করা হয়। মূলত ক্ষতিকর পণ্যের ব্যবহার হ্রাস ও ব্যবহারজনিত অসুখের চিকিৎসা খরচ মেটাতেই এ ধরনের সারচার্জ আরোপের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ থেকে প্রাপ্ত অর্থ সাধারণত সংশ্লিষ্ট রোগের চিকিৎসা, গবেষণা, সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি ইত্যাদি কাজে ব্যয় করা হয়ে থাকে।
Source: dainikamadershomoy,20 september,2015