আইন অমান্য করে সিগারেটের প্রচারণায় ঢাকা টোব্যাকো

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন অমান্য করে উইনস্টন ব্রান্ডের সিগারেটের প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে ঢাকা টোব্যাকো ইন্ড্রাট্রিজ (মূল কোম্পানি আকিজ গ্রুপ)।
সম্প্রতি রাজধানীর মতিঝিলের দিলকুশার রাস্তায় কোম্পানির কর্মীদের সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে মূল্যস্বল্পতা তুলে ধরে সিগারেটের প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে।
এর আগে, চলতি বছরের ২৬ মার্চ ঢাকা-চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছে বিনামূল্যে সিগারেট বিতরণ করে বিতর্কিত হয়েছিল কোম্পানিটি।
২০০৫ সালে প্রণয়ন করা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধন করে ২০১৩ সালের ২৯ এপ্রিল জাতীয় সংসদে পাস করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ২১ মার্চ ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০১৫’ চূড়ান্ত করা হয়।
বিধিমালার ৫ ধারার ১ উপধারায় উল্লেখ আছে— ‘কোনো ব্যক্তি (ক) প্রিন্ট বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়, বাংলাদেশে প্রকাশিত কোনো বই, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ডে বা অন্য কোনোভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করিবেন না বা করাইবেন না; (খ) তামাকজাত দ্রব্য ক্রয়ে প্রলুব্ধকরণের উদ্দেশ্যে, উহার কোনো নমুনা, বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে, জনসাধারণকে প্রদান বা প্রদানের প্রস্তাব করিবেন না বা করাইবেন না; (ছ) তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে যেকোনো উপায়ে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করিবেন না বা করাইবেন না। (৪) কোনো ব্যক্তি এই ধারার বিধান লঙ্ঘন করিলে তিনি অনূর্ধ্ব তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবে এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুনঃ একই ধরনের অপরাধ সংঘটন করিলে তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডিত হইবেন।’
এ ছাড়া ১৫ ধারার ১ উপধারায় বলা আছে, ‘এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তি যদি কোম্পানি হয়, তাহা হইলে উক্ত কোম্পানির মালিক, পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব বা অন্য কোনো কর্মকর্তা বা এজেন্ট উক্তরূপ অপরাধ সংঘটন করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে।’
কিন্তু আইনটির ৫ নম্বর ধারা অমান্য করে সম্প্রতি দিলকুশায় ঢাকা টোব্যাকোর কর্মীরা মূল্যস্বল্পতার প্রলোভন দেখিয়ে উইনস্টন সিগারেটের প্রচারণা চালিয়েছেন। সিগারেটের নাম সম্বলিত টি-শার্ট পরিহিত কর্মীরা রাস্তায় বিভিন্ন দোকান ছাড়াও পথচারীদের সিগারেটটি গ্রহণে প্রভাবিত করেছেন।
দিলকুশা ডাকঘরের সামনে এ প্রতিবেদকসহ দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের কয়েকজন সাংবাদিককেও সিগারেটটি গ্রহণের জন্য তারা অনুরোধ জানান।
আইন অমান্য করে সিগারেটের প্রচারণা কেন করা হচ্ছে জিজ্ঞেস করলে কোম্পানির বিটিএস কর্মী পরিচয় দিয়ে প্রচারণাকারী ইমরান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আইনে সিগারেটের প্রচারণা নিষিদ্ধ তা আমাদের জানা নেই।’
তিনি বলেন, ‘দিলকুশায় আমাদের ৭৮ জন কর্মী সিগারেটের প্রচারণা করছেন। পুরো ঢাকায়ই এর প্রচারণা চলবে। কিন্তু এ ধরণের কথা তো কেউ বলেনি। আর অপরাধ হলে নিশ্চয়ই কোম্পানি আমাদের পাঠাতো না।’
এর আগে গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই কোম্পানি উইনস্টন সিগারেট বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের প্রদান করে প্রচারণা চালায়। এর প্রতিবাদে তামাক বিরোধী বিভিন্ন জোট ও সংগঠন এ কোম্পানির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রতিবছর তামাক ব্যবহারের ফলে ১২ লাখ মানুষ ফুসফুসের ক্যান্সার, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসজনিত রোগসহ ৮টি কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এর প্রত্যক্ষ কারণে ৫৭ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে প্রতি বছর।
২০০৯ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল এ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে ১৫ বছরের ওপরে ৪ কোটি ১৩ লাখ মানুষ তামাক সেবন করে। যা মোট জনসংখ্যার ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এ ছাড়া ১৩ থেকে ১৫ বছরের ৭ শতাংশ শিশু তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করছে।

Source:bangla.thereport24.com,অক্টোবর ২৫, ২০১৫

About Tobacco Industry Watch

House 6 (3rd Floor, East Side), Main Road 3, Block A, Section 11, Mirpur, Dhaka-1216
Tel: +88-02-9005553, Fax : +88-02-8060751,
URL : www.tobaccoindustrywatchbd.org, Skype ID: progga.bd

Email: progga.bd@gmail.com, info@tobaccoindustrywatchbd.org