প্রতি বছর বাড়ছে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তামাক চাষের বিস্তৃতি
সরকারিভাবে মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছর চুয়াডাঙ্গা জেলার চারটি উপজেলায় জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তামাক চাষের বি¯ৃÍতি বাড়ছে। চাটুকাদার কথাবার্তা ও চাষিদের তামাক চাষ করতে আনুসাঙ্গিক খরচ বহনসহ সার কীটনাশক এবং নগদ অর্থের প্রলোভনে চাষীরা এ ক্ষতিকর চাষের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে একদিকে যেমন জনস্বাস্থ্যে এর বিরুপ প্রভাব পড়ছে, অন্যদিকে এই ক্ষতিকর চাষে মাটির উর্বরতা শক্তি হারিয়ে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ কৃষি জমি অনাবাদি থাকছে। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভাষ্যমতে, চলতি মরসুমে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৭২৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যো আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৪শ হেক্টর, জীবননগর উপজেলায় ১১০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৩৮ হেক্টর ও দামুড়হুদা উপজেলায় ১৮০ হেক্টর জমিতে এই ক্ষতিকর আবাদ হয়েছে। যা বেসরকারী হিসাবে অনেকগুন বেশি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার চারটি উপজেলায় ব্রিটিশ আমেরিকা টোব্যাকো, আবুল খায়ের কোম্পানি লিঃ ও ঢাকা টোব্যাকোসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানি তৎপর রয়েছে এ জেলায়। এসব কোম্পানীর প্রতিনিধিরা এক শ্রেনীর সহজ সরল কৃষককে মোটা অংকের মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে তামাক চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। আর এসব কোম্পানীর পক্ষ থেকে কৃষকদের মাঝে দেয়া হয়, বিনামূল্যে বীজ এবং ঋণ হিসেবে স্বল্পমূল্যে সার, কীটনাশক এবং নগদ টাকাসহ আনুসাঙ্গিক খরচ। এছাড়া প্রত্যেকটি কোম্পানি তাদের আওতাধীন তামাক চাষিদের উৎপাদিত তামাক কেনার জন্য কৃষকদের কার্ড সরবরাহ করে থাকেন। ওই কার্ড দেখিয়েই কৃষকরা পরে স্ব স্ব কোম্পানির কাছে তামাক বিক্রি করে থাকেন। চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা গ্রামের কৃষক রহমত আলী জানান, ধান,পাট ও ভুট্টা ফসল আবাদ করে গত কয়েক বছর আর্থিকভাবে লোকসান গুনতে হয়েছে। তাই এ বছর ১১ বিঘা জমিতে তামাক আবাদ করেছেন তিনি। তার চাষ করতে যা খরচ হয়েছে তা কোম্পানিই বহন করেছে।
জেলার দামুড়হুদা উপজেলার প্রতাবপুর গ্রামের কৃষক মঙ্গল মন্ডল জানান, আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এ বছর ৫ বিঘা জমিতে তামাক আবাদ করেছেন তিনি। এ বছর ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা লাভ করবেন বলে আশাবাদী এই কৃষক। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নির্মল কুমার দে জানান, কৃষকদের ক্ষতিকর এ তামাক চাষ না করতে প্রতিনিয়ত পরামর্শ দিয়ে আসছেন তারা। এরপরেও কিছু কিছু চাষী অধিক মুনাফার আশায় ক্ষতিকর এই চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। এর ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি জমির উর্বরা শক্তি কমে যাচ্ছে বলেও একমত পোষন করেন তিনি। চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৪০ হাজার লোক ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। তার মধ্যে ৯০ শতাংশই তামাক ব্যবহারের কারণে আক্রান্ত হয়ে থাকে। ফুসফুসের ক্যান্সার খুব দ্রæত ছড়ায় বলে এর চিকিৎসাও বেশ কঠিন। এ কারণে ৭০ শতাংশ রোগীই মারা যায়। চুয়াডাঙ্গা বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. রতন কুমার সিংহ জানান, তামাক ব্যবহারের ফলে ব্রঙ্কাইটিস, এজমা, ক্যান্সারসহ নানা ধরনের জটিল রোগ হয়। তিনি আরো জানান, দীর্ঘদিন কাঁচা তামাক নাড়াচাড়া করলেও গ্রিন টোব্যাকো সিক্নেসি নামক এক ধরনের রোগ হয়। এ রোগের ফলে মাথাঘোরা, বমি, দুর্বলতা, মাথাব্যথা, পেটব্যথা, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে। যা আক্রান্ত রোগীকে মৃত্যুর দুয়ারে নিয়ে যেতে পারে।
Source: amardeshonline,৩১ অক্টোবর ২০১৫