তামাক পণ্যের প্যাকেটে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা ( কোন অজুহাত নয় ১৯ মার্চের মধ্যে দিতে হবে)
তামাকজাত পণ্যের প্যাকেটে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা সংযোজন ক্ষেত্রে তামাক কোম্পানিগুলোর কোন অজুহাত শুনতে রাজি নয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের বেঁধে দেয়া আগামী ১৯ মার্চের মধ্যেই তামাক কোম্পানিগুলোকে সিগারেটসহ সব তামাকজাত পণ্যের প্যাকেটে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা দিতে হবে। প্যাকেটের উভয় পাশে উপরিভাগে পঞ্চাশ শতাংশ জায়গাজুড়ে ছবিসহ নয়টি সতর্কবার্তা দিতে হবে। এর মধ্য দিয়ে সব তামাকজাত পণ্যের প্যাকেটে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা সংযোজনকারী ৭৮তম দেশ হবে বাংলাদেশ। এর আগে জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, কানাডাসহ ৭৭টি দেশ এ আইন কার্যকর করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি বিলম্বিত করতে অনেক অজুহাত দেখাচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো। কয়েক দফায় চিঠিও চালাচালি হয়েছে। কিন্তু কোন অজুহাতই খাটবে না। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের বিধিমালায় উল্লেখিত ১৯ মার্চের মধ্যেই তামাক কোম্পানিগুলোকে সব তামাকজাত পণ্যের প্যাকেটে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা দিতে হবে। এর ব্যত্যয় হবে না। কেননা এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কঠোর অবস্থানে রয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের কো-অর্ডিনেটর ও যুগ্ম সচিব রুহুল কুদ্দুস বলেন, আশা করছি ১৯ মার্চের মধ্যেই সব তামাকজাত পণ্যের প্যাকেটে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা দেয়া সম্ভব হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে যথেষ্ট আন্তরিক। তামাকের ভয়াবহতা অনুধান করেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন আগামী বছর থেকে ধূমপায়ীরা মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাবে না। শুধু তাই নয় মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেতে হলে শিক্ষার্থী যে অধূমপায়ী এর প্রত্যয়নপত্রও জমা দিতে হবে।
জানা গেছে, ব্যান্ডরোল দিলে ওপরের অংশ কিছুটা ঢেকে যাবে এই যুক্তি দাঁড় করিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা প্যাকেটের নিচের অংশে দেয়ার প্রস্তাব করে। কিন্তু তাতে রাজি নয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্যান্ডরোল সাইডে লাগানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ব্যান্ডরোল সাইডে দিতে যে মেশিন দরকার সেটি তাদের নেই এবং এর জন্য তাদের অনেক টাকা খরচ হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে; তামাক কোম্পানিগুলো দাবি করছে, সতর্কবার্তা সংক্রান্ত কোন ইলেক্ট্রনিক কপি (সিডি)/চিঠি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তারা পায়নি। তবে আইনে বলা আছে এই কপি কোম্পানিকেই সরকারের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। উপরন্তু সরকারি নিয়ম হচ্ছে, গেজেট প্রকাশিত হওয়ার দিন থেকে এটি সবাই জানে বলে ধরে নিতে হবে। এরপরও তারা যখন বলেছে তারা চিঠি পায়নি, তখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে তাদের সবার ঠিকানা নিয়ে সিডি/চিঠি দেয়া হয়েছে। সিগারেট, বিড়ি, জর্দা-গুল কোম্পানিসহ মোট দুই'শ কোম্পানিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিছু কোম্পানি ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করায় সিডি/চিঠি ফেরত এসেছে।
সিগারেট বা অন্যান্য তামাকের ভয়াবহতায় বিশ্বের অনেক দেশেই তামাকজাত পণ্যে প্যাকেটে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা সংযোজন করেছে সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানরা। ভারতে সিগারেটের প্যাকেটের মোড়কের সামনে এবং পেছনে ৮৫ শতাংশ, নেপালে ৯০ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৮৫ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় প্যাকেটের সামনে ৭৫ শতাংশ এবং পেছনে ৯০ শতাংশ, শ্রীলংকায় সামনে পেছনে ৮০ শতাংশ। এমনকি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত ২৮টি দেশও সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে ৬৫ শতাংশ স্থান জুড়ে ছবি সহ স্বাস্থ্যবার্তা জুড়ে দিয়েছে।
তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে; বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে একজন ধূমপায়ী সিগারেট কেনা ও ব্যবহার করার সময় দিনে ২০ বার এবং বছরে সাত হাজার তিনশ বার সিগারেটের প্যাকেট দেখে। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে; সিঙ্গাপুরে তামাকজাত পণ্যের প্যাকেটে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা সংযোজনের পর ২৮ শতাংশ ধূমপায়ী বলেছেন যে তারা ধূমপানের পরিমাণ কমিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (সংশোধীত ২০১৩) এবং এ সংক্রান্ত বিধিমালা হয়েছে ২০১৫ সালে। সেখানে বলা হয়েছে, 'তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট, মোড়ক, কার্টন বা কৌটার উভয় পাশে মূল প্রদর্শনী তল বা যে সকল প্যাকেটে দুটি প্রধান পার্শ্ব নেই সেসব প্যাকেটের মূল প্রদর্শনী তলের উপরিভাগে অনূন্য শতকরা ৫০ শতাংশ স্থান জুড়ে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি সম্পর্কে, রঙিন ছবি ও লেখা সম্বলিত, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সতর্কবাণী, বিধি দ্বারা নির্ধাতির পদ্ধতিতে, বাংলায় মুদ্রণ করতে হবে।'
বিধিমালা অনুযায়ী ধূমপানে ব্যবহৃত তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে সাতটি এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে দুটি ছবিসহ সকর্তবার্তা থাকতে হবে। ধূমপানে ব্যবহৃত তামাকজাত পণ্যের ক্ষেত্রে যেসব সকর্তবার্তা থাকছে সেগুলো হলো_ ধূমপানের কারণে গলায় ও ফুসফুসে ক্যান্সার হয়, ধূমপানের কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয়, ধূমপানের কারণে স্ট্রোক হয়, ধূমপানের কারণে হৃদরোগ হয়, ধূমপান গর্ভের সন্তানের মৃত্যু ঘটায়, পরোক্ষ ধূমপানের কারণে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হয়, ধূমপানের কারণে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হয়। আর ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্যের ক্ষেত্রে থাকছে তামাকজাত দ্রব্য সেবনে মুখে ও গলায় ক্যান্সার হয় এবং তামাকজাত দ্রব্য সেবনে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হয়।
Source: thedailysangbad,Publish: 13-01-2016