অগ্রীম ঋণের লোভে বাড়ছে তামাক চাষ

তামাক কোম্পানির কাছ থেকে অগ্রীম ঋণ পাওয়ার লোভে দেশের উত্তর সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে দিন দিন বাড়ছে বিষবৃক্ষ তামাকের চাষ।

বিনা মূল্যে বীজ, ঋণে সার ও নগদ অর্থ দেওয়ার পাশাপাশি তামাক কেনার নিশ্চয়তা পেয়ে তামাক চাষে ঝুঁকে পড়ছেন এ অঞ্চলের চাষিরা।

ধান, গম, সরিষা, ভুট্টা, আলু, বেগুন, লাউ, শিম, মূলা ও ফুলকপি/বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষের জন্য সুনাম ছিল এ জেলার পাঁচটি উপজেলার। কিন্তু মাঠের পর মাঠ এখন চোখে পড়ে শুধু তামাকের ক্ষেত। যতো দিন যাচ্ছে, ততোই বাড়ছে তামাক চাষ। কৃষি বিভাগ তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করলেও বিভিন্ন কোম্পানির লোভনীয় আশ্বাসে তামাক চাষের দিকেই ঝুঁকে পড়ছেন এ অঞ্চলের চাষিরা।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২০১৪ লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় তামাক চাষ হয়েছিল ১১ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে। যা বৃদ্ধি পেয়ে পরের বছর চাষ হয়েছিল ১১ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে। এ বছর জানুয়ারিতেই ১১ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। যা আরো বাড়বে।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া এ তথ্য মানতে নারাজ স্থানীয় কৃষকরা। তাদের দাবি, চলতি বছর এ জেলায় দ্বিগুণ অর্থাৎ ২২ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে চাষ হয়েছে তামাক।

কৃষকরা বাংলানিউজকে জানান, ফসল চাষের শুরুতে কৃষকরা অর্থ সংকটে ভোগেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো চাষিদের মধ্যে কার্ড দিয়ে বিনামূল্যে বীজ সরবরাহ করে। সেই সঙ্গে কোনো শর্ত ছাড়াই ঋণে সার ও নগদ অর্থ দেয়।

এরপর প্রতিটি কোম্পানির নিজস্ব সুপারভাইজাররা প্রতিনিয়ত চাষিদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন। তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের উৎপাদিত তামাক কেনার শতভাগ নিশ্চয়তা দিচ্ছেন।

এসব লোভনীয় আশ্বাসে তামাক চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা।

তামাক চাষ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও অধিক মুনাফার আশায় নারীসহ পরিবারের সবাই সমানভাবে কাজ করছেন তামাক ক্ষেতে। এ কাজে অংশ নিচ্ছে শিশুরাও।

আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের দেবনাথপাড়ার চাষি সন্তোষ চন্দ্র, রবি নাথ ও হাসান আলী বাংলানিউজকে জানান, তামাক চাষের জন্য কোম্পানিগুলো অগ্রীম ঋণ হিসেবে সার ও নগদ টাকা দিচ্ছে। উৎপাদিত তামাক তারাই কিনে নেয় বলে বিক্রি নিয়ে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না। এমন নিশ্বয়তা অন্য কোনো ফসল চাষের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। তাই তারা তামাক চাষে ঝুঁকে পড়ছেন।

তবে সরকার যদি কোম্পানির মতো বিনা শর্তে ঋণসহ ফসল কেনার নিশ্চয়তা দেয় তাহলে তারা তামাক চাষ ছেড়ে দিয়ে অন্যান্য ফসল চাষ করবেন। এজন্য সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন তারা।

স্কুলের ফাঁকে বাবা-মায়ের সঙ্গে তামাক ক্ষেতে কাজ করে সারপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী প্রান্তী রানী।

তার ভাষায়, প্রতিবছর তামাক বিক্রির টাকায় নতুন পোশাক কিনে দেন বাবা-মা। তাই তামাক পাতার গন্ধ ভালো না লাগলেও তামাক ক্ষেতে কাজ করি।

কালীগঞ্জের চাপারহাট এলাকার চাষি আমির হোসেন ও মুছা মিয়া বাংলানিউজকে জানান, সবজি চাষে খরচের তুলনায় মুনাফা কম। কিন্তু তামাক চাষে মুনাফা বেশি। আবার কোম্পানির টাকায় চাষাবাদ করা যায়। তাই দিন দিন তামাক চাষির সংখ্যা বাড়ছে।

চাষিদের সুবিধার জন্য কোম্পানিগুলো এ জেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তুলেছেন বড় বড় ক্রয় কেন্দ্র ও গোডাউন। যেখানে চলে যায় কৃষকদের উৎপাদিত তামাক।

ব্রিটিশ আমলের নীলকর জমিদারদের মতোই লালমনিরহাটে এ বিষের আবাদ করার জন্য আস্তানা করেছে ঢাকা টোবাকো, আবুল খায়ের টোবাকো, নাসির টোবাকো, আকিজ টোবাকো ও বিডিসি টোবাকোসহ বেশ কয়েকটি তামাক কোম্পানি।

চাষিদের যাবতীয় সমস্যার ব্যাপারে সর্বদাই সজাগ থাকছেন এসব তামাক কোম্পানি সুপারভাইজার ও কর্মকর্তারা।

এদিক থেকে পিছিয়ে পড়ছেন সরকারের কৃষি বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সদর উপজেলার কালমাটি গ্রামের তামাক চাষি নজির হোসেন, হবিবর রহমান ও আবু বকর মিয়া বাংলানিউজকে জানান, তামাক কোম্পানির কর্মীরা প্রতিদিন মাঠে গিয়ে তামাক চাষিদের সঙ্গে দেখা করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করে থাকেন। অন্যদিকে, সবজি ক্ষেত নষ্ট হলেও সরকারি কৃষি কার্যালয়ের লোকজনের দেখাও পাওয়া যায় না।

তাই তারা আলু চাষ না করে তামাকের চাষ করেছেন।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাফায়েত হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগ যথেষ্ট আন্তরিক। কিন্তু চাষিরা অধিক মুনাফার আশায় তামাক চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।

Source: banglanews24,১৩ জানুয়ারি ২০১৬

About Tobacco Industry Watch

House 6 (3rd Floor, East Side), Main Road 3, Block A, Section 11, Mirpur, Dhaka-1216
Tel: +88-02-9005553, Fax : +88-02-8060751,
URL : www.tobaccoindustrywatchbd.org, Skype ID: progga.bd

Email: progga.bd@gmail.com, info@tobaccoindustrywatchbd.org