হারাগাছের অর্ধশত বিড়ি কারখানার বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ ও এর আশপাশের প্রায় ৫০টি বিড়ি কারখানার বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের তীর যাচ্ছে কাস্টমসের গুটিকয়েক কর্মকর্তার দিকে। কাস্টমস কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বেশকিছু কারখানা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক বিড়ি কারখানার মালিক।
রংপুরের হারাগাছ অঞ্চলের বিড়ি কারখানাগুলো সম্পর্কে জানতে সম্প্রতি রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট হারাগাছ সার্কেলে যোগাযোগ করা হয়। তবে বিষয়টি নিয়ে কোনো তথ্যই এ প্রতিবেদককে দেয়া হয়নি। সার্কেলের রাজস্ব কর্মকর্তা নাসের বদরুল ইসলাম বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কোনো তথ্য দিতে পারব না।’
বিড়ি শ্রমিক ও বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, হারাগাছ ও এর আশপাশে ছোট বড় মিলিয়ে ৩০টির মতো বিড়ি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার সঙ্গে চলতি বছর থেকে নতুন করে আরো ১০টি কারখানা উত্পাদন কার্যক্রম শুরু করেছে। এর বাইরে অন্তত ২০টির মতো কারখানা ব্রান্ডরোল না কিনেই বিড়ি উত্পাদন করছে। চলতি বছর শাহীন বিড়ি, কালু বিড়ি, কবীর বিড়ি, হাসান বিড়ি, স্বাধীন বিড়ি, আমিন বিড়ি, বাংলা বিড়ি, আশা বিড়ি, গোল্ডেন বিড়িসহ নতুন কয়েকটি কারখানা উত্পাদন শুরুর পরিকল্পনা করছে।
কারখানার শ্রমিকদের অভিযোগ, হারাগাছে প্রায় ৫০টি অবৈধ বিড়ি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানা ব্রান্ডরোল না কিনেই বিড়ি উত্পাদন ও তা বিক্রি করছে। একই ধরনের অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্য ও হারাগাছ বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত লাভলু। তিনি বলেন, ‘এখানকার বেশ কয়েকটি বিড়ি কারখানা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বিড়ি উত্পাদন করছে। রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার কারণে তারা অন্য কারখানাগুলোর চেয়ে কম দামে বিড়ি বিক্রি করতে পারছে। আবার এসব কারখানায় কোনো ধরনের নজরদারি না থাকায় শ্রমিকদের খুব অল্প মজুরিতে কাজ করিয়ে নিচ্ছে তারা।’
এ সম্পর্কে হারাগাছের মেরাজ ও পদ্ম বিড়ি কারখানার মালিক জাকির হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রতি ১ হাজার বিড়ি বিক্রির জন্য সরকারকে ৭০ থেকে ৮০ টাকা রাজস্ব দিতে হয়। প্রতি প্যাকেট বিড়ি ১২ টাকার কম দরে বিক্রি করলে আমাদের লোকসান গুনতে হয়। কিন্তু যেসব কারখানা সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে, তারা ৫-৬ টাকায় প্রতি প্যাকেট বিড়ি বিক্রি করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘হারাগাছে ৫০টির মতো বিড়ি কারখানা রয়েছে, যারা নিয়মিতভাবে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা করছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া হলে এখানকার বিড়ি শিল্প হুমকির মুখে পড়বে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বিড়ি কারখানা মালিক বলেন, ‘যেসব কারখানা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে, তাদের সঙ্গে রাজস্ব কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে। এ কারণে তারা সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।’
ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত শ্রমিকরা : হারাগাছের কয়েকটি বিড়ি কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি হাজার শলাকা বিড়ি তৈরির জন্য একজন শ্রমিক সর্বনিম্ন ১২ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা পারিশ্রমিক পান। একজন শ্রমিক দৈনিক সর্বোচ্চ চার হাজার শলাকা বিড়ি তৈরি করতে পারেন, যা বেশ কষ্টসাধ্য।
হারাগাছ বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, হারাগাছ ও আশপাশের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ বিড়ি তৈরির কাজ করেন। কারখানার পাশাপাশি বাড়িতে থেকে আরো প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক বিড়ি তৈরি করেন।
মজুরি সম্পর্কে জানতে চাইলে হারাগাছের বিড়ি শ্রমিক আরজিনা বেগম বলেন, ‘বিড়ি তৈরি অনেক পরিশ্রমের কাজ। সে তুলনায় মজুরি অনেক কম। এখানে মজুরি নিয়ে প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয় না।’
Source: bonikbarta,26 oct, 2016