কর না বাড়াতে নানা কৌশল তামাক কোম্পানির
আগামী বাজেটে তামাকপণ্যে কর না বাড়াতে নানা অপকৌশল শুরু করেছে তামাক কোম্পানিগুলো। প্রতিবছরের মতো এবারও যাতে সিগারেট ও বিড়িসহ অন্যসব তামাকপণ্যের ওপর সরকার কর না বাড়ায় সেজন্য গবেষণা, লোক দেখানো প্রাকাশ্য বাজেট আলোচনায় অংশ নেয়া, রাজস্ব বোর্ডে গোপন বৈঠক, প্রকাশ্যে বাজেট প্রস্তাবনা জমা না দেয়া, সিগারেট চোরাচালান-বিরোধী সপ্তাহ পালনে অর্থ দেয়াসহ বিভিন্ন কৌশলে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছে। তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতারা বলছেন, এগুলো তামাক কোম্পানির কূটকৌশল, যা তারা প্রত্যেক বছর বাজেটকে সামনে রেখে পরিকল্পিতভাবে করে থাকে। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সজাগ থাকতে হবে। তা না হলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হবে।
এ প্রসঙ্গে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান যুগান্তরকে বলেন, তারা যে আমাদের ওপরে চাপ আনবে, এ ব্যাপারটায় আমরা সচেতন। কিন্তু তারা বিশ্বে সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী, আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ব্যবসা করছে। আমাদের শেয়ারও কিছু আছে। কিছু কর্মসংস্থান করছে এবং কিছু করও দিচ্ছে। কিন্তু তারপরও এর ক্ষতির দিক বেশি। চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। মানুষের কর্মক্ষমতা কমে যায়। এসব হিসাব করলে শুধু মন্দ, মন্দ আর মন্দ দিকই সামনে চলে আসে। এজন্য আমরা ধীরে ধীরে এ জায়গা থেকে বের হতে কাজ করছি। আমরা সচেতন রয়েছি, শক্তভাবে কাজ করছি।
বাজেটকে সামনে রেখে অপতৎপরতা চালানোর বিষয়টি অস্বীকার করে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের (বিএটিবি) চেয়ারম্যান গোলাম মাঈনুদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, আমরা অপতৎপরতা করছি না। বাজেটে কর না বাড়ানোর জন্য ছোট ছোট শিল্পে যারা যুক্ত তারা চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু আমাদের মতো বড় কোম্পানির পক্ষে এটা করা যায় না। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, স্বাস্থ্য ক্ষতির কথা চিন্তা করে তামাকপণ্যে এমনভাবে করারোপ করা উচিত যাতে করে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। এক্ষেত্রে যে হারে মানুষের আয় বাড়ছে তার চেয়েও বেশি হারে কর আরোপ করা উচিত। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীকে বহুবার বলেছি। সূত্র জানায়, তামাক কোম্পানির অপকৌশলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সিগারেট চোরাচালানির ধোয়া তুলে কর না বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা। এক্ষেত্রে সিগারেট কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়, করারোপের মাধ্যমে সিগারেটের দাম বাড়ানো হলে চোরাচালান বাড়বে। ফলে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাবে। এ প্রচারণাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সম্প্রতি টার্গেটিং স্মাগলিং সিগারেট শীর্ষক প্রতিপাদ্য সামনে রেখে চোরাচালানকৃত সিগারেট প্রতিরোধ সপ্তাহ পালনের উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর থেকে পাঠানো হয়েছে এনবিআরের চেয়ারম্যানের কাছে। তামাকবিরোধী সংস্থা প্রজ্ঞার মতে, কৌশল হিসেবে তামাক কোম্পানিগুলো বাজেটের কয়েক মাস আগে তামাক কোম্পারি ফাঁদে পা দিয়ে এ ধরনের সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মঈনুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমরা কেবল প্রস্তাব আকারে দিয়েছি। এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বীকার করেন, এ সপ্তাহ পালনে আর্থিক সহয়তা দেবে সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। এছাড়া প্রাক-বাজেট আলোচনার নামে করা হয়েছে আইওয়াশ। ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) অনুযায়ী গোপনে তামাক কোম্পানির সঙ্গে বৈঠকের কোনো বিধান নেই। তারপরও রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে গোপন বৈঠকে পাঁয়তারা চালায় সিগারেট মেনুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। গত ১০ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে নির্ধারিত বৈঠক থাকলেও তারা আসেনি। এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, তারা গণমাধ্যমের সামনে বৈঠক করবে না। পরে ১৩ এপ্রিল বেলা ১১টায় বৈঠকের নির্ধারিত সময় থাকলেও তা হয়নি। ওই দিন বিকাল ৩টায় সময় থাকলেও প্রতিনিধিরা আসেন আড়াইটার দিকে। কিন্তু সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা বৈঠক করতে অনীহা প্রকাশ করেন। বিভিন্ন স্থানে ঘুরে অনেকবার ডেকে শেষ পর্যন্ত সাড়ে ৩টায় বৈঠকে আসেন তারা। কিন্তু সেখানে কোনো বাজেট প্রস্তাবনা কিংবা স্লাইড প্রদর্শন করা হয়নি। স্বল্প সময়ে এ বৈঠক শেষ করেই বৈঠকের সভাপতি এনবিআরের সদস্য ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীরের কক্ষে আলাদাভাবে আলোচনা করেন প্রতিনিধিরা।
Source: jugantor, May 01, 2017