দাম নির্ধারণে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ
চলতি অর্থবছরের (২০১৭-১৮) বাজেটে দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের সিগারেটের মূল্য সমান রাখতে তৎপর হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। তিনি এর পক্ষে সাফাই গেয়ে চিঠি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে। এতে বলা হয়, বিদেশি ব্র্যান্ডের সিগারেটে বেশি মূল্য নির্ধারণের ফলে কোম্পানিটির (একটি বহুজাতিক তামাক কোম্পানি) স্বাভাবিক উৎপাদন ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা নিরুৎসাহিত হচ্ছে। ফলে কোম্পানিটি নতুন করে বিনিয়োগ স্থগিত রাখতে বাধ্য হচ্ছে। বিষয়টি নতুন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক ধারণা দিতে পারে জানিয়ে তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান। তবে এর পেছনে রয়েছে ওই বহুজাতিক কোম্পানির ইন্ধন। তারা উপদেষ্টাকে ব্যবহার করে তাদের স্বার্থ হাসিলের প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু এতেও থেমে থাকেনি কোম্পানিটি। এখনও অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাসও দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতারা।
সূত্র জানায়, দেশীয় তামাক কোম্পানিকে সুরক্ষা দিতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে নিম্ন স্ল্যাবের (মূল্যস্তর) সিগারেটে বিদেশি ব্র্যান্ডের জন্য বেশি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেটে নিম্ন স্ল্যাবে দেশীয় ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে ৫২ ও বিদেশি ব্র্যান্ডে ৫৫ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে বাজেট ঘোষণার পর থেকেই এ নিয়ে চাপ তৈরি করে বহুজাতিক একটি সিগারেট কোম্পানি। গত জুনে বাজেট প্রস্তাবনার পর ওই কোম্পানির ওপর বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে উল্লেখ করে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠান প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।
জানতে চাইলে তামাকরিরোধী সংস্থা প্রগতির জন্য জ্ঞানের (প্রজ্ঞা) নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেখানে ঘোষণা দিয়েছে এসডিজি বাস্তবায়নে তামাকের ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার। সেখানে তার আশপাশের শক্তিশালী মানুষদের তামাক কোম্পানিগুলো এভাবে ব্যবহার করায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে অর্থমন্ত্রী বাজেটে চেষ্টা করেছেন দেশীয় তামাক কোম্পানিগুলোকে সুরক্ষা দিতে। কিন্তু একটি কোম্পানি যেভাবে অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে, এতে শেষ পর্যন্ত কি হয়, বলা যাচ্ছে না। তাদের কথা মতো দাম নির্ধারণ করলে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। এনবিআর সূত্র জানায়, দেশীয় তামাক কোম্পানিকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য নতুন জাতীয় বাজেটে সিগারেটের নিম্নস্তরকে দেশি ব্র্যান্ড ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড নামে দুটি নতুন স্তরে বিভক্ত করা হয়েছে। দেশীয় কোম্পানিগুলো ক্রমান্বয়ে তাদের বাজার হারাতে থাকায় এটা করা হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের সিগারেটের মূল্য বাড়াননি অর্থমন্ত্রী। তবে নিম্ন মূল্যস্তরের দেশীয় ব্র্যান্ডের সিগারেট প্রতি ১০ শলাকার মূল্য ২৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৭ টাকা ও সম্পূরক শুল্কহার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। নিম্ন মূল্যস্তরের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের সিগারেটের ক্ষেত্রে পৃথক মূল্যস্তর সৃষ্টি করে প্রতি ১০ শলাকার মূল্য ৩৫ টাকা নির্ধারণ ও সম্পূরক শুল্কহার ৫৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এতেই হিতে বিপরীত হয় কোম্পানিটির ক্ষেত্রে। কেননা তাদের বেশ কিছু ব্র্যান্ড রয়েছে বিদেশি। সূত্র জানায়, সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে তামাক কোম্পানির সঙ্গে বৈঠকে বসেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সেখানে কোম্পানির প্রতিনিধিরা দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের সিগারেটের মূল্য সমান রাখতে অনুরোধ জানান। এছাড়া এর পক্ষে নানা যুক্তিও তুলে ধরেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাসও দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
Source: Daily Jugantor, 16 August 2017