E-newsletter: February 2019 | ||||
জনস্বাস্থ্য সবার উপরে Public Health On Top মৃত্যু বিপণন-১ Death Marketing-1 মৃত্যু বিপণন-২ Death Marketing-2 Death Marketing Around |
||||
জনস্বাস্থ্য সবার উপরে
আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটকে প্রভাবিত করতে তামাক কোম্পানিগুলো সিগারেটের অবৈধ বাণিজ্যের জুজু দেখাতে শুরু করেছে। অথচ, বিশ্বব্যাংক বলছে তামাকপণ্যে কর বাড়ানোর সাথে অবৈধ বাণিজ্য বৃদ্ধির তেমন কোনো সম্পর্ক নেই এবং বাংলাদেশে সিগারেটের অবৈধ বাণিজ্য ২৭টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম, মাত্র ১.৮ শতাংশ। অতিসম্প্রতি (ফেব্রুয়ারি, ২০১৯) বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত তামাকপণ্যের অবৈধ বাণিজ্য নিয়ে Confronting Illicit Tobacco Trade: A Global Review of Country Experiences শীর্ষক একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে সিগারেটের অবৈধ বাণিজ্য ১৭ শতাংশ, পাকিস্তানে ৩৮ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ৩৬ শতাংশ এবং লাটভিয়ায় সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রতিবছর বাজেটের আগে তামাক কোম্পানিগুলো করপ্রণেতা ও নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে রাজস্ব ক্ষতির ভীতি সৃষ্টি করতে সিগারেটের চোরাচালান এবং অবৈধ বাণিজ্যের ভয় দেখিয়ে থাকে। আমাদের নীতিনির্ধারকবৃন্দও অনেক সময় তামাক কোম্পানির এই মিথ্যা দাবির সাথে একমত পোষণ করেন, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। ২০১৭ সালে তামাক কোম্পানির প্ররোচনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কর্তৃক ‘টার্গেটিং স্মাগলড সিগারেট’ নামে চোরাচালানকৃত সিগারেট প্রতিরোধ সপ্তাহ আয়োজনের একটি উদ্যোগ নিলেও গণমাধ্যমসহ তামাকবিরোধী সংগঠনসমূহের অব্যাহত সমালোচনায় পরবর্তীতে তা বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ২০১৬ সালে সংগৃহীত বিভিন্ন দেশের সিগারেটের (২০ শলাকা প্যাকেট) গড় মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সবচেয়ে কমদামি সিগারেটের মূল্য বাংলাদেশের কমদামি সিগারেটের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। কাজেই বাংলাদেশে কার্যকরভাবে কর বাড়িয়ে তামাকপণ্যের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে গেলেও ব্যাপক চোরাচালান হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। গ্যাটস ২০১৭ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০০৯ এর তুলনায় ২০১৭ সালে সিগারেট ধূমপায়ীর সংখ্যা ১৫ লক্ষ বৃদ্ধি পেয়েছে। সিগারেটের সহজলভ্যতাই এর অন্যতম প্রধান কারণ। প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) কর্তৃক রিলেটিভ ইনকাম প্রাইস (আরআইপি) পদ্ধতির মাধ্যমে সিগারেটের স্তরভিত্তিক সহজলভ্যতা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৫-১৬ সালে একজন ধূমপায়ীর মধ্যম, উচ্চ এবং প্রিমিয়াম স্তরে ১০০০ শলাকা সিগারেট কিনতে যেখানে মাথাপিছু জিডিপি’র যথাক্রমে ৪.১৫, ৬.৪৬ ও ৯.৩২ শতাংশ ব্যয় হতো, সেখানে ২০১৭-১৮ সালে একই পরিমাণ সিগারেট কিনতে ব্যয় হয়েছে যথাক্রমে ৩.২৭, ৫.০৯ ও ৭.৩৪ শতাংশ। অর্থাৎ সিগারেটের প্রকৃত মূল্য ক্রমশ হ্রাস পাওয়ায় সিগারেটের ব্যবহার কমছে না। তামাকে বর্ধিত করারোপ জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার অন্যতম প্রধান রক্ষাকবজ। আমাদের প্রত্যাশা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তামাক কোম্পানি দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে আসন্ন বাজেটে কার্যকরভাবে তামাকপণ্যে করারোপের উদ্যোগ গ্রহণ করবে, যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে অবদান রাখবে।
|
||||