জনস্বাস্থ্য সবার উপরে
জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল (জেটিআই) মৃত্যুবিপণনে চরম আগ্রাসি হয়ে উঠেছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে পুঁজি করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে জেটিআই-এর (ব্র্যান্ড কালার এবং স্লোগান ‘জাপানিজ কোয়ালিটি’) সাম্প্রতিক মিডিয়া ক্যাম্পেইন ছিল নজিরবিহীন ঘটনা। তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো এই আগ্রাসি ক্যাম্পেইনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। এর আগে জনস্বাস্থ্যবিরোধী এই বিনিয়োগের ব্যাপারেও জোর আপত্তি জানিয়েছিল সংগঠনগুলো। কিন্তু কোন কিছুতেই র্কতৃপক্ষের টনক নড়ছেনা। প্রতিবেশী দেশ ভারত জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক শিল্পে বৈদেশিক বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করেছে। একই পথ অনুসরণ করে বাংলাদেশের বৈদেশিক বিনিয়োগ নীতির সংস্কার করলে ভবিষ্যতে চায়না টোব্যাকোসহ অন্যান্য বহুজাতিক মৃত্যুবণিকের প্রবেশ পথ রুদ্ধ হবে। এদিকে, আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে বিড়ির মূল্য ও কর কমাতে ব্যাপক তৎপর হয়ে উঠেছে বিড়ি শিল্পের লবিস্টরা। এরই মধ্যে বিড়ির ওপর শুল্ককর কমিয়ে এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে অর্থমন্ত্রী বরাবর আধাসরকারি পত্র (ডিও) দিয়েছেন অন্তত ২১ সংসদ সদস্য। প্রতি বছর বাজেটের আগে সাংসদদের একটি অংশ বিড়ি শ্রমিক হিতৈষী হয়ে উঠেন। শ্রম অধিকার লঙ্ঘণকারী শিশুশ্রম নির্ভর এই শিল্পকে সংস্কারের মাধ্যমে মানবিক করে তোলা কিংবা বিড়ি শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যাপারে কোন অবস্থান নিতে দেখা যায়না তাদেরকে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশে গড়ার যে লক্ষ্য রয়েছে তার কোনোটির সঙ্গেই এগুলো সঙ্গতিপূর্ণ নয়। মনে রাখতে হবে, প্রতি বছর বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের কারণে ১ লক্ষ ২৬ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে এবং তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু ও অসুস্থতায় বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। তাই তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে রাষ্ট্রযন্ত্রে তামাক কোম্পানির সবধরনের ছদ্মবেশী অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যথাযথ সংস্কার ও পূর্ণাঙ্গ প্রয়োগের পাশাপাশি এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ এর আলোকে নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়নই হবে কার্যকরী পদক্ষেপ।
|