E-newsletter: August 2022 | ||||
জনস্বাস্থ্য সবার উপরে Public Health On Top মৃত্যু বিপণন-১ Death Marketing-1 মৃত্যু বিপণন-২ Death Marketing-2 Death Marketing Around |
||||
জনস্বাস্থ্য সবার উপরে
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী প্রস্তাবকে নস্যাৎ করতে এরই মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে বহুজাতিক তামাক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি)। কোম্পানিটি গত ২৫ আগস্ট ২০২২ তারিখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর বৃহৎ করদাতা ইউনিটে একটি চিঠি পাঠিয়েছে যেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশোধনী প্রস্তাবকে 'বাস্তবতাবিবর্জিত ও অপ্রণয়নযোগ্য' আখা দিয়ে এ বিষয়ে এনবিআর-এর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। খসড়া সংশোধনীর কিছু উপধারা যেমন: ধূমপান এলাকার বিলুপ্তিকরণ, তামাক কোম্পানির সিএসআর কর্মসূচি নিষিদ্ধকরণ, খুচরা শলাকা বিক্রি এবং ই-সিগারেটসহ সবধরনের ভ্যপিং পণ্য নিষিদ্ধকরণ ইত্যাদি সার্বিকভাবে তামাক ব্যবসাকে হুমকির মুখে ফেলবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনী পাশ হলে বাজারে নকল সিগারেট বাড়বে এবং সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাবে মর্মে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে চিঠিতে। বস্তুতঃ রাজস্ব অবদানকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর মাধ্যমে নীতিনির্ধারকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলোর অতি পরিচিত কূটকৌশল (পৃষ্ঠা-৭)। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এক প্রতিবেদন (পৃষ্ঠা-১) অনুযায়ী, বাংলাদেশে তামাকসৃষ্ট রোগের চিকিৎসায় বছরে প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা ব্যয় হয়, যা এই খাত থেকে অর্জিত রাজস্বের তুলনায় অনেক বেশি। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে বছরে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। সম্প্রতি ইলেক্ট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেমের ওপর প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে ১৭ জন কথিত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। স্বাক্ষরকারী ‘বিশেষজ্ঞ’দের প্রত্যেকেই তামাক কোম্পানির সরাসরি অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ফ্রন্টগ্রুপ (যেমনঃ CoHEAR, GTNF, AHRA ইত্যাদি)-এর সঙ্গে জড়িত, যদিও চিঠিতে কেউই এই সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করেননি। উন্নত বিশ্বে প্রচলিত সিগারেটের পাশাপাশি ই-সিগারেটের বিক্রয় বৃদ্ধির হারও কমে আসায় দক্ষিণ এশিয়ার বিশাল বাজারের দিকে চোখ পড়েছে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলোর। কথিত বিশেষজ্ঞদের চিঠি তাই প্রকৃতপক্ষে তামাক কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বার্থ টিকিয়ে রাখার কৌশল মাত্র। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসির সঙ্গে আরও বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (লক্ষ্যমাত্রা ৩-এ) বাস্তবায়নে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে তামাকের ব্যবহার ২৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে অঙ্গীকারাবদ্ধ সরকার। মূলত এই প্রেক্ষাপটেই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অথচ অতীতের মতো এবারও সংশোধনীকে কেন্দ্র করে তামাক কোম্পানিগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের দূরত্ব তৈরির ছক কষছে। কোম্পানির ফাঁদে পা না দিয়ে সরকারের সকল মন্ত্রণালয় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় একযোগে কাজ করবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। |
||||