ধূমপান বিধিমালা (অবিলম্বে বাস্তবায়িত হোক)
বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে তামাক সেবন করে। এদের বেশির ভাগই পুরুষ। আবার অনেকেই ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করেন। ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবনকারীদের অধিকাংশই নারী। বাংলাদেশে তামাক সেবনের এ চিত্র নিঃসন্দেহে ভয়াবহ। ধোঁয়াবিহীন এবং ধোঁয়াযুক্ত তামাকসেবীদের অনেকেই জানেন না, তাদের এ তামাক সেবন শরীরের জন্য কতটা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে, গ্রামের সাধারণ ও নিরক্ষর মানুষের মধ্যেই এর আধিক্য চোখে পড়ে। অথচ তামাক নিয়ন্ত্রণে আমাদের দেশে আইন রয়েছে। তবে এ আইন মূলত কোনো কাজে আসছে না এর প্রায়োগিক সফলতা না থাকায়। সোমবার যায়যায়দিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালাটি আটকে রয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ে। ফলে বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় আইনটি কার্যকরের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ধূমপানের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় আইনটির যথাযথ বাস্তবায়নই কাম্য।
তথ্যমতে, ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই ২০০৫ সালে প্রণীত এ-সংক্রান্ত আইনটি সংশোধন করে 'ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩' নামে সংসদে পাস হয়। এরপর খসড়া বিধিমালা মতামতের জন্য একই বছরের ৩০ অক্টোবর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। খসড়ায় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলকে সাংগঠনিক রূপ দেয়ার মাধ্যমে শক্তিশালী করা এবং একই সঙ্গে তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র সতর্কবাণী মুদ্রণ, সিনেমা-নাটকে ধূমপানের দৃশ্য দেখানোর নিয়ম, পাবলিক প্লেসে ধূমপান থেকে বিরত থাকাসহ তামাকজাত দ্রব্য ধ্বংস ও বাজেয়াপ্তকরণের বিষয়ে স্পষ্ট করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা যে, আইনটি পাসের পর কিছু দিন পাবলিক প্লেসে ধূমপানকারীদের জরিমানা করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সতর্কবার্তা মুদ্রণ ছাড়া তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
একটা বিষয় স্পষ্ট, বিধিমালা প্রণয়ন না হওয়া এবং ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম পরিচালনার অভাবে তামাকসেবীদের সংখ্যা আশানুরূপ কমেনি। শিক্ষার যথাযথ আলো গ্রামীণ সমাজে এখনো সেভাবে প্রবেশ করেনি বিধায় গ্রামীণ মহিলাদের মধ্যে জর্দা ও সাদার পাতা দিয়ে পান খাওয়ার অভ্যাস রয়ে গেছে। একইভাবে রয়ে গেছে বিড়ি, সিগারেট কিংবা গুল-জর্দা সেবনকারী পুরুষও। মনোদৈহিক পরিবর্তনের সঙ্গে মানসিক চাহিদা হিসেবে কিশোররা ধূমপানের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। গোটা পৃথিবীর চিত্র একই। তারা মনে করে, স্মার্ট হতে গেলে ধূমপান করতে হবে। এদের একটি অংশ আবার ধূমপান করতে করতে অধিক ক্ষতিকর বিভিন্ন নেশায়ও যুক্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে কেউ কেউ হয়তো কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয় কিংবা তাদের মধ্যে ইচ্ছা জাগে তামাক সেবন না করার জন্য। কিন্তু তত দিনে শরীরের যেটুকু ক্ষতি হওয়ার, তা হয়ে যায়। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশে ক্ষতিগ্রস্ত এমন লোকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য সেবনের কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। ভয়াবহ এ চিত্র দেখার পরও মানুষের মধ্যে তামাক ছেড়ে নিরাপদ জীবনযাপনের চেষ্টা দেখা যায় না, এটা সত্যিই দুঃখজনক। তবে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে কিছুটা হলেও সেবনকারীর সংখ্যা কমে আসতে পারে বলে আমরা মনে করি।
সার্বিক বিবেচনায় আমরা বলতে চাই_ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ধূমপায়ী বাড়ানোর প্রচেষ্টায় ব্যাপক প্রচার চালিয়ে থাকে ফলে তারা যাতে প্রচার না চালাতে পারে সে ব্যাপারে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে সরকারের সুবিধাপ্রাপ্তির সুযোগও সর্বতোভাবে বন্ধ করা দরকার। আমরা মনে করি, তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধের উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হলে এবং আইন বাস্তবায়ন করা গেলে ধূমপায়ীর সংখ্যা হ্রাস পেতে পারে। আমাদের প্রত্যাশা, সার্বিক ক্ষতির কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকার তামাকজাত দ্রব্য ও ধূমপান নিয়ন্ত্রণে 'ধূমপান বিধিমালা' চূড়ান্তসহ আইনের যথাযথ বাস্তবায়নে আন্তরিক হবে।
Source: যায়যায়দিন,সেপ্টেম্বর, ১৬, ২০১৪