জনস্বাস্থ্য সবার উপরে
আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশ থেকে বিড়ি বিতাড়িত করার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত বিড়ি লবির কাছে হার মানলেন অর্থমন্ত্রী। আরেক দফা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়লো নিম্ন আয়ের মানুষের। ২০১৭-১৮ চূড়ান্ত বাজেটে ফিল্টারবিহীন প্রতি প্যাকেট (২৫ শলাকা) বিড়ির খুচরা মূল্য ১৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১২.৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতি প্যাকেট বিড়ির খুচরা মূল্য ১০.৬১ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ টাকা করা হলে সারাদেশে বিড়ি শ্রমিকদের মাঠে নামায় বিড়ি কোম্পানির মালিকেরা। তারা শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ, শ্রমিক সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে পত্রপত্রিকায় খোলাচিঠি প্রকাশ করে। এছাড়া বাজেট আলোচনায় কতিপয় সাংসদ বিড়ি কোম্পানির পক্ষ অবলম্বন করেছেন, যা খুবই দুঃখজনক। অন্যদিকে, নিম্নস্তরের ‘আন্তর্জাতিক ব্রান্ড’ এর সিগারেট প্রতি ১০ শলাকা ৩৫ টাকার পরিবর্তে ২৭ টাকায় বাজারজাত করতে এখনো মরিয়া বিএটিবি। গণমাধ্যমের ব্যাপক চাপে চূড়ান্ত বাজেটে অর্থমন্ত্রী পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিম্নস্তরের সিগারেটের ‘আন্তর্জাতিক ব্রান্ড’ এর মূল্য ও কর হার যথাক্রমে ৩৫ টাকা ও ৫৫% এ অপরিবর্তিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও বাজারে এর কোনো প্রতিফলন নেই। বিএটিবি এখনো নিম্নস্তরের প্রতি ১০ শলাকা সিগারেট ৩৫ টাকার পরিবর্তে ২৭ টাকায় বিক্রি করছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত বাজেটে দেশীয় তামাক কোম্পানিকে সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে নিম্নস্তরের সিগারেটের ‘দেশীয় ব্রান্ড’ এর ১০ শলাকার সর্বনিম্ন মূল্য ২৩ টাকা থেকে ২৭ টাকা এবং ‘আন্তর্জাতিক ব্রান্ড’ এর মূল্য ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বাজেট ঘোষণার পর পরই বিএটিবি তাদের উৎপাদিত নিম্নস্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের মূল্য ৩৫ টাকা নয় ২৭ টাকা উল্লেখ করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে। অথচ বাংলাদেশে একমাত্র বিএটিবি’ই আন্তর্জাতিক কোম্পানি হিসেবে নিম্নস্তরে আন্তর্জাতিক ব্রান্ড এর সিগারেট (ডারবি, হলিউড, পাইলট ইত্যাদি) উৎপাদন ও বাজারজাত করে থাকে এবং পৃথিবীর অনেক দেশেই এগুলোর প্রচলন রয়েছে। কাজেই বিএটিবি এই স্তরের সিগারেট ২৭ টাকায় বাজারজাত করতে পারেনা। তবে এ নিয়ে বাজেট ঘোষণার আগেই বিএটিবি অর্থ উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করে এবং অর্থ উপদেষ্টা বিষয়টি বিবেচনার জন্য অর্থমন্ত্রী বরাবর ডিও লেটার প্রেরণ করেন। এর প্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী বিএটিবি’র বক্তব্য শোনার জন্য এনবিআরকে নির্দেশনা প্রদান করেন। এবং বাজেট ঘোষণার পর অর্থমন্ত্রীর সাথেও বৈঠক করে বিএটিবি। বিএটিবির এসব অপতৎপরতা গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে। এপরিপ্রেক্ষিতে চূড়ান্ত বাজেটে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল রাখা হয় নিম্নস্তরের সিগারেটের ঘোষিত মূল্য ও কর হার। আমাদের প্রত্যাশা মাননীয় অর্থমন্ত্রী পরবর্তিতে এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় নিম্নস্তরের সিগারটের ‘আর্ন্তজাতিক ব্রান্ড’ এর মূল্য ও কর হার যথাক্রমে ৩৫ টাকা ও ৫৫% এ অপরিবর্তিত রাখবেন। একইসাথে নির্দেশনা ভঙ্গের জন্য এনবিআর বিএটিবি’র বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কারণ, জনস্বাস্থ্য সবার উপরে।
|