E-newsletter: May 2018 | ||||
জনস্বাস্থ্য সবার উপরে Public Health On Top মৃত্যু বিপণন-১ Death Marketing-1 মৃত্যু বিপণন-২ Death Marketing-2 Death Marketing Around |
||||
জনস্বাস্থ্য সবার উপরে
বহুজাতিক তামাক কোম্পানির পরামর্শে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার উদ্ভট মিশনে নেমেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামী তিন বছরের মধ্যে বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের উৎপাদন বন্ধে পরামর্শ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সম্প্রতি একটি আধাসরকারি পত্র শিল্প মন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রী, কৃষি মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী, মন্ত্রীপরিষদ সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব বরাবর প্রেরণ করা হয়। চিঠিতে সিগারেটের অবৈধ বাণিজ্য ও উচ্চ চাহিদার কথা বিবেচনা করে তা বন্ধে ২০ বছর সময় দরকার বলে উল্লেখ করা হয়। তামাকবিরোধীদের ধারণা, এই চিঠির পিছনে বহুজাতিক তামাক কোম্পানির হাত রয়েছে। কারণ, প্রথমত: এই চিঠির ব্যাপারে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল এবং তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো কিছুই জানেনা। দ্বিতীয়ত: চিঠির বেশিরভাগ তথ্য-উপাত্ত অসত্য এবং পরস্পরবিরোধী। যেমনঃ সিগারেটের উচ্চ চাহিদার তথ্যটি অসত্য; সিগারেটে নয়, বাংলাদেশে উচ্চ চাহিদা রয়েছে বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন তামাকে। তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে মাত্র ৩০-৩৫ ভাগ লোক সিগারেট ব্যবহার করেন; বাকী ৬৫-৭০ ভাগই বিড়ি ও ধোঁয়াবিহিীন তামাক ব্যবহার করেন। তৃতীয়ত: বাংলাদেশে সিগারেটের অবৈধ বাণিজ্য খুবই সামান্য। ২০১৬ সালে ১১৪টি দেশের সিগারেটের মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে সিগারেটের দাম ১১১টি দেশের তুলনায় কম; বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে সিগারেটের দাম অনেক কম। চতুর্থত: চিঠিতে তামাকের চাহিদা হ্রাস সংক্রান্ত কোন পদক্ষেপের কথা না বলে কেবল সরবরাহ (উৎপাদন) বন্ধের কথা বলা হয়েছে, যা এফসিটিসি এবং বিদ্যমান তামাকনিয়ন্ত্রণ আইনের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বেশিরভাগ তামাক ব্যবহারকারীর (৬৫-৭০%) তামাকের চাহিদা না কমিয়ে হঠাৎ করে ৩ বছরের মধ্যে উৎপাদন বন্ধ করে দিলে বরং উল্টো ফল হবে, এসব পণ্যের চোরাকারবার শুরু হবে। এফসিটিসি এবং তামাকনিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী কর বাড়িয়ে তামাকপণ্যকে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়া, সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রচলন, পাবলিক প্লেস ও পরিবহণে ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, বিজ্ঞাপন-প্রচারণা ও পৃষ্ঠপোষকতা নিষিদ্ধকরণ প্রভৃতির মাধ্যমে তামাকের চাহিদা নির্মূল করেই তামাকমুক্ত দেশ গঠন সম্ভব। তামাকের যোগান হ্রাসের ব্যাপারেও এফসিটিসিতে স্পষ্ট নির্দেশনা (যেমন: তামাকের বিকল্প ফসল উৎপাদনে সহায়তা প্রদান, অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে ও তাদের দ্বারা তামাকপণ্য বিক্রি বন্ধ ইত্যাদি) রয়েছে। কাজেই তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে এফসিটিসির সঠিক বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই। তাই সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং সবশেষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেও এফসিটিসি বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। শেষত: পৃথিবীব্যাপী তামাক কোম্পানিগুলো কৌশলে সরকারসমূহকে তামাকনিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন উদ্ভট পরামর্শ প্রদান করে থাকে, যেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠির বেশিরভাগ পরামর্শও বাস্তবায়নযোগ্য নয়। যেমনঃ ৩ বছরের মধ্যে বিড়ি বন্ধের উদ্ভট ভাবনা থেকে অর্থমন্ত্রী ইতোমধ্যে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে। প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ বাজেটে বিড়ি বন্ধে ২০৩০ সালকে লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। যদিও এক্ষেত্রেও এফসিটিসির আলোকে কোন রোডম্যাপ প্রদান করা হয় নাই। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও বহুজাতিক তামাক কেম্পানির হস্তক্ষেপের চিত্র ফুটে উঠেছে। পর পর তিন বছর যাবত অতি উচ্চস্তরের সিগারেটের দাম (দশ শলাকা ১০১ টাকা) অপরিবর্তিত রাখার মাধ্যমে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলোকে মৃত্যুবিপণন ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। অথচ গত তিনবছরে জাতীয় মাথাপিছু আয় (নমিন্যাল) বেড়েছে ২৪.৬৪ শতাংশ। সুতরাং একই সময়ে এই স্তরের সিগারেটের দাম না বাড়ায় এর প্রকৃত মূল্যের ক্রমহ্রাসমানতা অব্যাহত রয়েছে। একইসাথে, বাজেট সংশ্লিষ্ট এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিগত অর্থবছরে বিএটিবি'র নিম্নস্তরের সিগারেট থেকে প্রাপ্য ২০০০ কোটি টাকা রাজস্ব মওকুফের ব্যবস্থা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আমাদের জোর দাবি, সরকার বহুজাতিক তামাক কোম্পানির ঘেরাটোপ থেকে বের হয়ে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের লক্ষ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকেই এফসিটিসির আলোকে একটি কার্যকর রোডম্যাপ তৈরি ও বাস্তবায়ন করবে। |
||||