Sun Sun Sun Sun
E-newsletter: September 2019
 

জনস্বাস্থ্য সবার উপরে Public Health On Top

মৃত্যু বিপণন-১ Death Marketing-1

মৃত্যু বিপণন-২ Death Marketing-2

Death Marketing Around

 

জনস্বাস্থ্য সবার উপরে

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি ২০১৯ চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে সিগারেট কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ)। অতিসম্প্রতি সংগঠনটি অর্থ সচিব, স্বাস্থ্যসেবা সচিব এবং এনবিআর চেয়ারম্যানকে অনুলিপি দিয়ে অর্থমন্ত্রী বরাবর একটি চিঠি দিয়েছে যেখানে তামাক নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষিত পদ্ধতিসমূহ অন্তর্ভুক্ত না করতে মনগড়া ব্যাখ্যা ও ভিত্তিহীন যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে।

বিএটিবির পরিচালনা পর্ষদে ৫ এর অধিক উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা/আমলা মনোনিত থাকায় কোম্পানিটি সরকারের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তামাক নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপসমূহে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পায়। তামাকবিরোধীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে খসড়া নীতিমালায় বিএটিবিতে সরকারের বিনিয়োগ (বর্তমানে ১০%) পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হলেও বিসিএমএ চিঠিতে সরকারি অংশিদারিত্ব ধরে রাখার ব্যাপারে মত দিয়েছে। চিঠিতে ইলেক্ট্রনিক সিগারেট, ভ্যাপিং, হিটেড (আইকিউওএস) টোব্যাকো প্রোডাক্ট ইত্যাদিকে প্রথাগত সিগারেটের ‘নিরাপদ বিকল্প’ হিসেবে উপস্থাপন করে এগুলো বন্ধ না করার কথা বলা হয়েছে। ইউরোপ, আমেরিকাসহ বেশ কিছু দেশে এসব পণ্যের ব্যবহার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে এবং ইতোমধ্যে ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ ৩০টির অধিক দেশ এগুলো নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশে ইমার্জিং ট্যোবাকো প্রডাক্ট এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করার পূর্বেই খসড়া নীতিমালায় এসব পণ্য নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিসিএমএ বাংলাদেশকে সিগারেটের উপর উচ্চ কর আরোপ করা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে অভিহিত করে পুনরায় কর বাড়ালে চোরাচালান বাড়বে এবং সরকার রাজস্ব হারাবে বলে সতর্ক করেছে। বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে সিগারেট অত্যন্ত সস্তা। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সবচেয়ে কমদামি সিগারেটের মূল্য বাংলাদেশের কমদামি সিগারেটের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৬ সালের তথ্যমতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মিয়ানমার, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার পরেই বাংলাদেশে সবচেয়ে কম দামে সস্তা ব্রান্ডের সিগারেট পাওয়া যায়। কর বাড়ানোর সাথে রাজস্ব ফাঁকি ও রাজস্ব হারানোর যে কল্পনাপ্রসূত যুক্তি বিসিএমএ তুলে ধরেছে তা কোনভাবেই সত্য নয়। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক তামাকপণ্যের অবৈধ বাণিজ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে বাংলাদেশে সিগারেটের অবৈধ বাণিজ্য ২৭টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম মাত্র ১.৮ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তামাকের ওপর কর বাড়ানোর সঙ্গে অবৈধ বাণিজ্য বৃদ্ধির তেমন কোনো সম্পর্কও নেই। প্লেইন প্যাকেজিং পদ্ধতির প্রচলনকে বিসিএমএ অকার্যকর হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করেছে। অথচ, এর গুরুত্ব অনুধাবন করে থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সৌদিআরব, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ কমপক্ষে ১৬টি দেশ এর অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়াও শ্রীলংকা, নেপালসহ আরো একাধিক দেশ প্লেইন প্যাকেজিং প্রথা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে তামাকপণ্যের প্যাকেটে ৫০ শতাংশ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা মুদ্রণের বিধান রয়েছে। অথচ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপালে ৯০ শতাংশ, ভারতে ৮৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৮৫ শতাংশ এবং শ্রীলংকায় ৮০ শতাংশ জায়গা জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর প্রচলন রয়েছে। তামাক খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ নিষিদ্ধ না করার জন্য বিসিএমএ একাধিক যুক্তি তুলে ধরেছে, যার মধ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি অন্যতম। এটি অত্যন্ত হাস্যকর যুক্তি। আসল সত্য, ৪৯ শতাংশ তরুণ জনগোষ্ঠির এই দেশ এখন তামাক কোম্পানিগুলোর লোভনীয় বাজার। জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ এখন‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট’ যুগে রয়েছে, অর্থাৎ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠির সংখ্যা এখন নির্ভরশীল জনগোষ্ঠির চেয়ে বেশি। অথচ তামাক ব্যবহারের ফলে এই কর্মক্ষম জনগোষ্ঠির একটা বড় অংশ অকালমৃত্যু এবং উৎপাদনশীলতা হারানোর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যা ভবিষ্যত প্রজন্মকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিবে।

বাংলাদেশে প্রতি বছর তামাক ব্যবহারের কারণে ১ লক্ষ ২৬ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে এবং তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু ও অসুস্থতায় বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। তামাক ব্যবহারজনিত এই ক্ষয়ক্ষতি এবং ভয়াবহতা উপলব্ধি করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং এলক্ষ্য অর্জনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রণয়নের কাজ শুরু করে। আমাদের জোর দাবি তামাক কোম্পানির বিভ্রান্তিমূলক প্রচেষ্টা এবং হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি চূড়ান্ত করতে হবে, যা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের পথ সুগম করবে।