মৃত্যু বিপণন-২
বৃটিশ হাই কমিশনারের মাধ্যমে আদালদের দেওয়া কর ফাঁকির রায় প্রভাবিত করার চেষ্টা বিএটিবির
হাইকোর্ট এর রায়কে বেআইনী ও বৈষম্যমূলক আখ্যায়িত করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক দাবিকৃত করফাঁকির অর্থ বাবদ ১ হাজার ৯শত ২৪ কোটি টাকা রাজস্ব মওকুফে ব্রিটিশ হাই কমিশনার এর মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করার প্রমাণ মিলেছে ‘সুশাসন ও উন্নত করপোরেট কালচার’ এর জন্য সরকারিভাবে ‘গোল্ড মেডেল’ প্রাপ্ত বহুজাতিক তামাক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি) এর বিরুদ্ধে। তামাকবিরোধীরা বলছেন, স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের আদালতের রায়কে বেআইনী ও বৈষম্যমূলক অভিহিত করার মাধ্যমে বিএটিবি যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছে তা আদালত অবমাননার শামিল। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে চলতি বছরের ৮ এপ্রিল বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাই কমিশনার মিস এলিসন ব্লেক এর সাথে সাক্ষাত করে বিএটিবি’র একটি প্রতিনিধি দল। এসময় প্রতিনিধি দলটি বিএটিবি’র পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেহজাদ মুনিম স্বাক্ষরিত একটি চিঠিও প্রদান করে যেখানে বিষয়টি সমাধানে ব্রিটিশ হাই কমিশনার এর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। বিএটিবি বাংলাদেশে পরিচালিত ব্রিটেনের অন্যতম বৃহৎ একটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে চিঠিতে আরও বলা হয়, দাবিকৃত এই অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য করা হলে বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়বে প্রতিষ্ঠানটি যা কারোরই কাম্য নয়। কেননা প্রতিষ্ঠানটিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রায় ১৬ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে। চিঠিতে বাংলাদেশ সরকারকে প্রচ্ছন্নভাবে হুমকি দিয়ে আরও বলা হয়েছে এ বিষয়ে সুবিচার পেতে প্রয়োজনে দুই দেশের সরকারের মধ্যে সম্পাদিত দ্বি-পাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তির আওতায় আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার চিন্তাও করছে প্রতিষ্ঠানটি। উল্লেখ্য, ২০০৯-১০ থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর সময়কালে মধ্যম মূল্যস্তরের পাইলট ও ব্রিস্টল ব্রান্ড সিগারেটকে নি¤œ মূল্যস্তরে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে রাজস্ব বাবদ এ অর্থ ফাঁকি দেয় প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টি নজরে এলে ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর তিনটি দাবিনামায় উক্ত রাজস্ব পরিশোধের নির্দেশ দেয় এনবিআর। বিএটিবি উক্ত দাবিনামাকে চ্যালেঞ্জ করে ২০১৫ সালে রিট পিটিশন দায়ের করে। সর্বশেষ মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক গত ৬ মার্চ ২০১৬ তারিখের এক রায়ে এ অর্থ সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে জমা প্রদানের নির্দেশ দেয়। তামাক বিরোধীরা বলছে, সিগারেটে করারোপের জন্য ব্যবহৃত বিদ্যমান ৪ স্তরবিশিষ্ট মূল্যস্তর প্রথা চালু থাকায় বিএটিবি এই করফাঁকি দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তাদের দাবি, আগামীতে বিদ্যমান একাধিক স্তরবিশিষ্ট মূল্যস্তর প্রথা তুলে দিয়ে একক মূল্যস্তর প্রথা চালু করবে সরকার। একই সাথে ভবিষ্যতে ‘সুশাসন ও উন্নত করপোরেট কালচার’ এর জন্য ‘গোল্ড মেডেল’ প্রদানের ক্ষেত্রেও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো সতর্ক থাকবে তা নাহলে প্রতিষ্ঠানটির বদনামের দায়ভার সরকারের ওপর বর্তাবে বৈকি।
|