মৃত্যু বিপণন-২
বেঙ্গল শাস্ত্রীয় সংগীত উৎসব আয়োজনে অন্তরালের কুশীলব বিএটি!
বহুজাতিক তামাক কোম্পানি বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) বিশ্বের ১৫০টির বেশি দেশে তাদের মৃত্যুবিপণন পরিচালনা করছে। বিএটি দক্ষিণ এশিয়ার তামাক ব্যবসায় সবচেয়ে বেশি আধিপত্য বিস্তার করে আছে। তামাক ব্যবসা বাড়াতে তারা নানা ধরনের অবৈধ পন্থা ও কূটকৌশল অবলম্বন করে। এবং একইসাথে তামাক নিয়ন্ত্রণমূলক যেকোন পদক্ষেপ ঠেকাতে সদা মরিয়া থাকে কোম্পানিটি। বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী তামাক পণ্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ হলেও তামাক কোম্পানির কৌশলী বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা বন্ধ হয়নি। ভারতের বৃহত্তম তামাক কোম্পানি আইটিসি লিমিটেড (ভূতপূর্ব ইন্ডিয়া টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড) ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকায় 'BENGAL ITC-SRA CLASSICAL MUSIC FEST-2012’ নামে একটি যৌথ সংগীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।১ আইটিসি সংগীত রিসার্চ একাডেমি (ITC-SRA) এই ইন্ডিয়া টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড (ITC)এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান। তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত এই সংগীত একাডেমি সারাবিশ্বে ভারতীয় সংগীতের ঐতিহ্য তুলে ধরতে কাজ করে।২ উল্লেখ্য, বহুজাতিক তামাক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) এই ভারতীয় তামাক কোম্পানির ৩০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ।৩ এই শাস্ত্রীয় সংগীত অনুষ্ঠানটি দেশ-বিদেশের অসংখ্য সংগীতপ্রিয় মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করায় অংশগ্রহণকারী শ্রোতার সংখ্যা প্রতিবছর বেড়েই চলেছে। প্রভাবশালী মন্ত্রী, গুরত্বপূর্ণ আমলা, সাংসদ ও রাজনীতিক এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন আয়োজক প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে। ভারতের শাস্ত্রীয় সংগীত জগতের বিখ্যাত শিল্পীরা নিয়মিত অংশগ্রহণ করায় বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি ব্যপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। উল্লেখ্য, এই সংগীত শিল্পীদের অধিকাংশই আইটিসি-এসআরএ অধীনে স্থায়ী কিংবা অস্থায়ীভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করে ৪। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন এই সংগীতানুষ্ঠানটি আইটিসি সংগীত গবেষণা একাডেমির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়৫,৬ প্রতিবছর নিয়মিত আয়োজন করলেও ২০১৩ সালেই তারা অনুষ্ঠানের শিরোনাম থেকে ‘আইটিসি-এসআরএ’ অংশটুকু বাদ দিয়ে দেয়। ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৩’ এর লংঘন এড়াতেই তারা এই পন্থা অবলম্বন করে থাকতে পারে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ৫(গ) ধারা অনুসারে, কোনো তামাক কোম্পানি এই ধরনের অনুষ্ঠানের পৃষ্টপোষকতা করতে পারে না। বিএটি’র এদেশীয় প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি) ২০১৫ সালে উৎসবস্থলে একটি সিগারেট বিক্রয় কেন্দ্রসহ ধূমপান এলাকা (Smoking Zone) স্থাপন করে যা পুরো আয়োজনে তাদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে।৭ অথচ এই অনুষ্ঠান কেন্দ্রস্থল বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়াম একটি পাবলিক প্লেস এবং আইন অনুযায়ী ধূমপানমুক্ত এলাকা। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন প্রতি বছরের মত এবারেও (২০১৬) ২৪ থেকে ২৮ নভেম্বর এই অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘোষণা প্রদান করেছে। আসন্ন এ অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ বিএটিবি’র প্রচ্ছন্ন ও প্রত্যক্ষ উপস্থিতি অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করছে তামাক বিরোধী সংগঠনসমূহ। সুতরাং, বিএটিবি’র এই কর্মকান্ড মোকাবেলায় আইন বাস্তবায়নকারী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। তা না হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন সম্ভব হবেনা।
Source: 1.http://www.thedailystar.net/news-detail-252837 2.http://www.itcportal.com/…/corporate-social-responsibility.… 3.http://www.bat.com/…/vwPage…/DO9DCL3B/$FILE/medMDA87PVT.pdf… 4.http://www.itcsra.org/…/sra_news_views…/academy_updates.html 5.http://www.thehindu.com/…/the-changemaker/article7329823.ece 6.http://bengalclassicalmusicfest.com/project/press-release/ 7.http://www.tobaccoindustrywatchbd.org/newslett…/page/1/e/224
|