স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে ভেপিং প্রচারণা
বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নিজেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা (পদস্থ: সার্জারি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ) দাবি করে ডা. রাজিব জোয়ার্দার নামের জনৈক ব্যক্তি একটি ফেসবুক পেইজের প্রকাশিত ভিডিওতে ভেপিংয়ের সমর্থনে জোর প্রচারণা চালিয়েছে। “ভয়েস অব ভেপারস” নামের এই ফেসবুক পেইজটি বাংলাদেশ ইলেক্ট্রোনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেন্ডস্টা) নামে এক ভেপিং ব্যবসায়ী সংগঠন দ্বারা পরিচালিত। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস (ই-সিগ, ভ্যাপিং ইত্যাদি)-র আমদানি, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধকরণের যে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলো, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার নামে এহেন প্রচারণা তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
গত ১০ ডিসেম্বর ২০২০ ফেসবুকে প্রকাশিত ওই ভিডিওতে মি. রাজিব বলেন, “ভ্যাপিং শতভাগ নিরাপদ”। দেশে “ভেপিং শিল্প বিকাশমান” এমনটা দাবি করে তিনি বলেন, “আমাদের বিপক্ষে যারা বলে, তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য বা আইনসম্মত কোন যুক্তি নাই।” ভিডিওতে বেন্ডস্টা সভাপতি সুমন জামানের সঙ্গে তাকে কথা বলতে ও ভেপিং করতে দেখা গেছে।
মি. রাজিব ভিডিওতে স্বীকার করে বলেন, ভেপিং এক ধরনের আসক্তি। তবে ভেপিং “ভালো আসক্তি” হতে পারে বলে তিনি প্রচার করার চেষ্টা করেছেন। চলমান কোভিড-১৯ মহামারি শেষে বিশ্বের সুপরিচিত ভেপিং যন্ত্রাদির সংগ্রাহকদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। ভিডিওর শেষে ভয়েস অব ভেপার্স উদ্যোগকে “অত্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ” হিসেবে উল্লেখ করেন এবং দর্শকদের এই প্ল্যাটফর্মে যোগ দিয়ে একযোগে নিজের অবস্থান তুলে ধরার আহ্বান জানান, যেনো নীতিনির্ধারকবৃন্দ “ভ্যাপিং যে ভালো, তা স্বীকার করে নেয়। ”
এ বিষয়ে তামাক বিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) বলছে, একজন চিকিৎসক, বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা দাবি করে ভেপিং এর পক্ষে এমন সরব ও অত্যুৎসাহী প্রচারণা তামাক নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অবস্থানকে ম্লান ও প্রশ্নবিদ্ধ করে বলে প্রজ্ঞা মনে করে। প্রজ্ঞার মতে, যেহেতু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়, তাই ভয়েস অব ভেপার্স ও বেন্ডস্টার মঞ্চে একজন সরকারি কর্মকর্তার এহেন প্রকাশ্য সমর্থন কোন স্বার্থগত দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা জরুরি। ভবিষ্যতে এমন কোন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে যত দ্রুত সম্ভব এই ইস্যুতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানায় প্রজ্ঞা।
প্রজ্ঞা আরও বলছে, তরুণ সমাজের মাঝে ভেপিংয়ের ব্যবহার বাড়াতে দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে জড়িয়ে নানাবিধ ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করে আসছিলো ভয়েস অব ভেপার্স পেইজটি। পেইজটিতে এ যাবৎ “ভেপিংয়ের মাধ্যমে ক্যান্সার এড়ানো সম্ভব”, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপ অফিস ভেপিং সমর্থন করেছে”, ইত্যাদি মিথ্যা ও হাস্যকর দাবি উত্থাপন করে ভেপিং সামগ্রীর ক্রেতা বাড়ানোর চেষ্টা করেছে।
প্রজ্ঞার পক্ষ থেকে বলা হয়, “ভেপিং শতভাগ নিরাপদ” উল্লেখ করে মি. রাজিবের করা দাবির পুরোটাই ভিত্তিহীন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভিন্ন প্রতিবেদনে ইলেক্ট্রোনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেমস বা এন্ডস (যেমনঃ ই-সিগারেট, ভেপিং ইত্যাদি)-কে সরাসরি “স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সংস্থাটি আরো জানিয়েছে যে, “ভেপিংয়ে ফুসফুসের ক্ষতি হয়” এবং ধূমপান ত্যাগে ভেপিংয়ের আদৌ কোন ভূমিকা আছে কিনা, সে দিকটিও এখনও পরিস্কার নয়।
প্রজ্ঞা জানায়, অন্যদিকে ২০২০ সালে নেচার জার্নালে প্রকাশিত দক্ষিণ কোরিয়ার ৭,৫০৫ জন পুরুষ এন্ডস ব্যবহারকারীদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপান ত্যাগের বদলে ৮৫ ভাগ ব্যবহারকারীই প্রথাগত সিগারেট এবং ভেপিং একইসাথে ব্যবহার করছে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে হৃদরোগের উচ্চ ঝুঁকি পরিলক্ষিত হয়।
এ অবস্থায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক উপরোক্ত বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে ভেপিং, ই-সিগারেট এবং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টস (এইচটিপি) এর মতো ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টসমূহ আমদানি ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছে প্রজ্ঞা। এছাড়া তামাক নিয়ন্ত্রণে সমমনা সব সংগঠনকে ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস (ইটিপি) ব্যবসায়ীদের আগ্রাসী ও মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো যাচ্ছে।
Source: Daily Janakantha, 08 February 2021