তামাকের বিষে উৎসমুখেই দূষিত হচ্ছে হালদা নদী

উৎসমুখেই তামাকের বিষে দূষিত হচ্ছে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদী। খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়, মানিকছড়িসহ পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে নদীটির দুই তীরে পাঁচ বছর ধরে তামাক চাষ হচ্ছে। তামাকের নির্যাস ও চাষে ব্যবহৃত সার এবং রাসায়নিক মিশ্রিত পানি সরাসরি গিয়ে পড়ছে নদীতে। এই নদীর উৎপত্তি খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার হালদাছড়া থেকে।
রাসায়নিক দূষণ হালদার জলজ প্রাণীর জন্য হুমকি বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে। হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য ও মাছের প্রজনন নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে এই বিশদ গবেষণা হয়। গবেষণায় হালদার দুই তীরে তামাক চাষ বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
মানিকছড়িতে হালদা নদীর তীরে এবার ১০০ একরের বেশি জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। তবে উপজেলা কৃষি দপ্তরের হিসাবে এর পরিমাণ আরও কম। এ ছাড়া রামগড়েও হালদা পারে নতুন করে কয়েক একর জমিতে তামাক চাষাবাদ হচ্ছে।
হালদা নদী নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণায় যুক্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, ‘গবেষণার জন্য আমরা নদীর উৎপত্তিস্থল থেকে ভাটি পর্যন্ত বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছি। এ সময় হালদার উৎপত্তিস্থলের নিচে মানিকছড়ি এলাকায় শত শত একর জমিতে তামাক চাষের দৃশ্য দেখেছি। কয়েক বছর ধরে এই তামাক চাষ হচ্ছে। বর্ষার শুরুতে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে তামাকের মূল এবং পচা তামাক পাতা গিয়ে পড়ে নদীতে। এতে পানি দূষিত হয়। আবার দূষণটাও হয় মাছের প্রজনন মৌসুমে।’
সরেজমিনে ৩ ফেব্রুয়ারি মানিকছড়ি গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার যোগ্যাছড়া ও আছাড়তলী এলাকায় হালদা নদীর তীরে তামাক চাষ হচ্ছে। ডিসেম্বর মাস থেকে চাষ শুরু হয়। এখন তামাকগাছগুলোর পাতা বড় হয়েছে। তামাকখেতে সেচ দেওয়ার জন্য পাশের হালদা নদীতে বসানো হয়েছে মেশিন। খেতের পাশেই রাখা হয়েছে মাটির বড় চুল্লি। এই চুল্লিতে তামাক পাতাগুলো শুকিয়ে পোড়ানো হয়। খেতের এক পাশে তামাক পাতা ছিঁড়ে শুকাচ্ছেন অনেক চাষি।
মানিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এবার উপজেলায় হালদা নদীর তীরে ৫০ একরের মতো জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। তামাক চাষে কৃষকেরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। তামাক কোম্পানিগুলো অগ্রিম টাকা দিয়ে দেয় তাঁদের। ফলনও ভালো। তবে এতে মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পায়।
আছাড়তলীতে হালদা পারে নিজের তামাকখেতের পরিচর্যা করছিলেন মতিন মিয়া নামের এক বৃদ্ধ। তিনি এবার প্রায় দুই একর ভূমিতে তামাক চাষ করেন। তামাক পাতা আর কয়েক দিন পরেই সংগ্রহ করা হবে বলে তিনি জানান। কিছু কিছু পাতা ইতিমধ্যে সংগ্রহ করে শুকাতেও দিয়েছেন।
মতিন মিয়া বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো শুকনো মৌসুম (নভেম্বর থেকে মার্চ) শুরুর সময় টাকা দিয়ে যায়। এরপর তামাক বীজ, সার ও কীটনাশক দিয়ে যায়। তামাক চাষে লাভ বেশি। তাই সবজির বদলে এখানকার কৃষকেরা তামাক চাষে বেশি আগ্রহী। মানিকছড়িতে ১০০ একরের বেশি জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে চার-পাঁচ বছর ধরে। চাষের জন্য হালদা থেকে পানি ব্যবহার করেন তাঁরা।
গবেষণায় বলা হয়, হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার সময় এপ্রিল থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত। এর আগে শুকনো মৌসুমে উজানে তামাক চাষ হয়। তামাক চাষের উচ্ছিষ্ট পচা পাতা, কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ধোয়া পানি বৃষ্টির সঙ্গে নদীতে গিয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে তামাকগাছের মূলও নদীতে এসে পড়ে। এ ছাড়া তীরে চুল্লিতে তামাক পাতা পোড়ানোর কারণে পাতার উচ্ছিষ্ট অংশও নদীতে গিয়ে পড়ে। ডিম ছাড়ার সময় তামাকের বিষ ছড়িয়ে পড়ে নদীতে। এতে জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়বে।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি কর্মকর্তা তরুণ কুমার ভট্টাচার্য বলেন, তামাক চাষ বন্ধের কোনো নিষেধাজ্ঞা তাঁদের কাছে নেই। তাই চাইলেও এটি বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, দিন দিন খাগড়াছড়িতে তামাক চাষ বাড়ছে। এবার পুরো জেলায় ৬৭৩ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হচ্ছে।

Source: Prothom alo, 13 february, 2017

About Tobacco Industry Watch

House 6 (3rd Floor, East Side), Main Road 3, Block A, Section 11, Mirpur, Dhaka-1216
Tel: +88-02-9005553, Fax : +88-02-8060751,
URL : www.tobaccoindustrywatchbd.org, Skype ID: progga.bd

Email: progga.bd@gmail.com, info@tobaccoindustrywatchbd.org