কৌশলে চলছে সিগারেট কোম্পানির প্রচারণা
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে সিগারেটের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ থাকলেও কৌশলে চলছে বিভিন্ন সিগারেট কোম্পানির প্রচার-প্রচারণা। কোথাও লটারিতে পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে প্রকাশ্যে চলছে সিগারেট বিক্রি ও প্রচারণা। আবার কোথাও দোকানপাটে ডিসপ্লে সাজিয়ে দিয়েছে ছোট-বড় বিভিন্ন সিগারেট কোম্পানি। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো থেকে বিনামূল্যে সিগারেট বিক্রির বড় বাক্স, মুদি দোকানে ক্যাশবাক্স এবং নগদ টাকা বা উপহার সামগ্রী দেওয়ায় এসব ডিসপ্লে রক্ষণাবেক্ষণ করছে দোকানীরাও। সুষ্ঠু ও কার্যকরী তদারকি না থাকায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এসব প্রচারণা বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের সাধুর ব্রিজের পাশে ফুটপাতে প্রচারণার আসর বসিয়েছে আবুল খায়ের গ্রুপ নামের একটি সিগারেট কোম্পানি। এখান থেকে ৩২ টাকায় দু’প্যাকেট ‘মেরিস’ সিগারেট কিনলে যে কেউ পাচ্ছেন একটি লটারির টিকেট। এতে পুরস্কার হিসেবে উঠে আসছে গ্যাস লাইটার, সাবান, চিরুনি, বালতি, গামলা, ছাতা ইত্যাদি। সিগারেট বিক্রির এই কৌশলী প্রচারণায় অংশ নিয়ে সিগারেট কিনছেন ধূমপায়ী-অধূমপায়ী এমনকি শিশুরাও। ক্যামেরায় ছবি তোলা শুরু করতেই লাপাত্তা ওই কোম্পানির লোকজন।
উপস্থিত শিশু সাব্বির ও গৌতম জানায়, তারা সাধুর ব্রিজের পাশে উপস্থিত হয়ে দেখে লটারি। পুরস্কারের লোভে লটারির সঙ্গে দু'প্যাকেট করে সিগারেটও কিনেছে তারা।
সেখানে উপস্থিত স্থানীয় ভ্যানচালক মজিবর, চানাচুর বিক্রেতা শাহ আলম ও ব্যবসায়ী আনোয়ার জানান, তারা দু প্যাকেট সিগারেট কিনে লটারির টিকেট পেয়েছেন। এতে একজন পেয়েছে গ্যাস লাইটার, আরেকজন পেয়েছেন চিরুনি ও অপর একজন একটি প্লাস্টিকের গামলা পেয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রচারণায় আরও একধাপ এগিয়ে প্রভাবশালী ‘ব্রিটিশ-অ্যামেরিকান টোব্যাকো’ এবং ‘ঢাকা টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রি’। তারা মাদারীপুর শহরসহ আশপাশের প্রত্যন্ত এলাকাতেও মুদি ও চা-সিগারেটের দোকানে টাকা দিয়ে এবং পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে খালি প্যাকেট দিয়ে প্রদর্শনী সাজিয়ে দিয়েছে। এছাড়া বিনামূল্যে সিগারেট বিক্রির বড় বাক্স, মুদি দোকানে ক্যাশবাক্স, সিগারেটের খালি প্যাকেটসহ সুদৃশ্য বিভিন্ন ডিসপ্লে সাজানো হয়েছে কোথাও এমনিতেই, আবার কোথাও পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে।
মাদারীপুর শহরের সুমন হোটেল এলাকার চায়ের দোকানদার আকতার হোসেন বলেন, 'আমার দোকানে হলিউড সিগারেটের প্যাকেট সাজিয়ে রাখার জন্য কোম্পানি একটি মোবাইল ফোন দিয়েছে। আমাকে দেওয়ার কথা ছিল একটি দামী টাচ মোবাইল ফোন। কিন্তু আমাকে অল্প দেড় হাজার টাকা দামের মোবাইল দিয়েছে। এর আগে প্যাকেট সাজিয়ে রাখার জন্য ছয়'শ টাকাও দেয় কোম্পানি।'
আরেক দোকানদার মোহাম্মদ আলী বলেন, 'আমাকে একটি ক্যাশবাক্স দিয়েছে গোল্ডলিফ-বেনসন কোম্পানি। আমার দোকানে ওই ক্যাশবাক্সে তারা সিগারেটের প্যাকেট সাজিয়ে রেখে যায়।'
মাদারীপুর শহরের পুরানবাজার মুচিবাড়ি মোড়ের দোকানদার গোপাল দাস বলেন, 'আমার দোকানে গোল্ডলিফের প্যাকেট সাজিয়ে রেখেছে, তবে কোনও পুরস্কার বা কোনও কিছু আমি পাই নি।'
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, জেলা পর্যায়ে ডিস্ট্রিবিউটর অফিসে এসব প্রচারণার জন্য রয়েছে কমপক্ষে আট থেকে ১০ জন করে বেতনভুক্ত কর্মী। তারা খালি প্যাকেট দিয়ে প্রদর্শনী তৈরি ও দোকানে স্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে।
মাদারীপুর শহরের লেকেরপাড়ে দিদার হোসেনের চায়ের দোকানে সিগারেটের পুরনো প্যাকেট দিয়ে সাজানো ডিসপ্লে লাগানোর কাজে নিয়োজিত ছিল সজীব নামের সিগারেট কোম্পানির এক কর্মী। তার কাছে থেকে জানা যায়, মাদারীপুরের ‘ব্রিটিশ-অ্যামেরিকান টোব্যাকো’র ডিস্ট্রিবিউর অফিসে তার মত ৭/৮জন প্রচারকর্মী রয়েছে। যাদের কাজ হলো পুরনো সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে ডিসপ্লে তৈরি করে বিভিন্ন স্থানে ও চায়ের দোকানে সাজিয়ে দেওয়া। সজীবের বাড়ি শহরতলীর লক্ষ্মীগঞ্জ এলাকায়। বেকার থাকার চেয়ে এই কাজকেই ভাল মনে করে ১৭ বছর বয়সী সজীব। এজন্য সে বেতন পায় সাত হাজার টাকা। প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ১৮টি দোকান বা স্পটে তাকে ভিজিট করতে হয়।
তবে এসব প্রচার-প্রচারণার বিষয়ে কথা বলতে রাজী হননি কোনও সিগারেট কোম্পানির ডিলার বা ডিস্ট্রিবিউটররা। মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ও তামাক নিয়ন্ত্রণ কমিটির সভাপতি জিএসএম জাফরউল্লাহ বলেন, সিগারেট কোম্পানি থেকে যে কোনও ধরণের প্রচার প্রচারণা আইন অনুযায়ী অবৈধ। আগামীতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে মাদারীপুরে গত দুই বছরেও জেলা প্রশাসন বা পুলিশ প্রশাসন থেকে এ ধরণের প্রচার-প্রচারণার জন্য কোনও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
Source: bangla tribune,29 June,2015