সংরক্ষিত বনভূমি ও মাতামুহুরী তীরে তামাকের আগ্রাসন
কক্সবাজারের চকরিয়ায় ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষিজমির পাশাপাশি তামাকের আগ্রাসন চলছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের খাসজমিতে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সংরক্ষিত বনের ভেতর ও নদীর তীরে তামাক চাষে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। এমনকি সরকারি খাসজমিতে তামাক চাষ বন্ধে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের বমু বনবিট ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের মানিকপুর বনবিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এবং উপজেলার মাতামুহুরী নদীতীরের বমু বিলছড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, কৈয়ারবিল, বরইতলী ও চিরিঙ্গা ইউনিয়নের অন্তত ১ হাজার একর খাসজমিতে তামাকের আবাদ শুরু হয়েছে চলতি মৌসুমে। সরেজমিন দেখা যায়, বেশির ভাগ এলাকায় ইতিমধ্যে রোপণ করা তামাকের চারা বড় হতে শুরু করেছে। আর কিছুদিন গেলেই শুরু হবে তামাকশোধনের কাজ। এজন্য বনাঞ্চলের আশপাশে ও লোকালয়ে কয়েক হাজার তামাক চুল্লি নির্মাণকাজও চলছে। সূত্র জানায়, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের আওতাধীন বমু বনবিটের প্রায় ২ হাজার ২০০ একর বনভূমি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০০৫ সালে লামা বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করে। বর্তমানে এই বনবিটটি লামা সদর রেঞ্জের নিয়ন্ত্রণাধীন। বেশ কবছর ধরে স্থানীয় কাঠপাচারকারী চক্র ও সংশ্লিষ্ট বনবিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে এক সময়ের বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ বমু বনবিট এখন ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। এছাড়া বেশ কবছর ধরে বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভিলেজাররা (বন জায়গীরদার) তামাকচাষের পর তা শোধনের জন্য নির্বিচারে বনজ সম্পদ উজাড়ের কারণে এই বনবিটে এখন আর অবশিষ্ট কিছুই নেই বললেই চলে। তামাকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছেন বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা (উবিনিগ)। সংস্থাটির কক্সবাজারের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রফিকুল হক টিটো কালের কণ্ঠকে জানান, চকরিয়া উপজেলার অন্তত ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে কম করে হলেও চার হাজার ৬শ' একর জমিতে তামাকের আগ্রাসন চলছে। তন্মধ্যে সংরক্ষিত বনের কিছু অংশ এবং মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের খাস জমি মিলিয়ে অন্তত ১ হাজার একর জমিতে তামাকের আবাদ চললেও প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই। রফিকুল হক টিটো বলেন, 'মূলত তামাক কম্পানিগুলোর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রান্তিক চাষিদের প্রলোভনে ফেলে তামাকচাষে উদ্বুদ্ধ করে আসছে। এমনকি বিনা সুদে ঋণ দেওয়া ছাড়াও তামাক ক্রয়ের সময় ভাল দাম দেওয়ার প্রতিবছর খাসজমিতেও তামাকের আবাদ বাড়ছে। মাঠপর্যায়ের চাষিদের সাথে কথা বলে এই চিত্র পেয়েছি আমরা।' স্থানীয় পরিবেশ সচেতন লোকজন মনে করছেন, জরুরি ভিত্তিতে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে মাতামুহুরী নদীর দুই তীর ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে রোপিত তামাক ধ্বংস না করলে পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না। এতে মাতামুহুরী নদীর পানি দূষিত হয়ে পরিবেশের বারোটা বাজাবে।' এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাঈন উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'চলতি বছরও মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের খাসজমিতে ব্যাপক হারে তামাকের চাষ হচ্ছে বলে শুনেছি। তাই কোন কোন এলাকায় তামাকের চাষ হচ্ছে তার খোঁজ নিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার তহসিলদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।' তিনি আরো বলেন, 'রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও খাসজমিতে তামাক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে আগামী সপ্তাহের মধ্যে উপজেলা প্রশাসন ত্বরিত উদ্যোগ নেবে।'
Source: kalerkantho,12 january 2014