নাইক্ষ্যংছড়িতে ফসলী জমিতে তামাক চাষে তৎপর কোম্পানীর লোকজন

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা এবং র্পাশ্ববর্তী গর্জনিয়া, কচছপিয়া, ইদগড় ও কাউয়ারখোপ এলাকার ৪ হাজার একর রবি শস্যের জমিতে তামাক চাষে তৎপর টোব্যাকো কোম্পানীর লোকজন। গত ১৬ অক্টোবর থেকে রবির মৌসূম শুরুর সাথে সাথে ৩ টি কোম্পানীর কয়েকশ’ লোক রাতদিন মরিয়া হয়ে কাজ করছে রবি শস্যের চাষিদের বাগে আনতে। ফলে মাঠেই মারা যেতে বসেছে সরকারের রবি শস্যের যাবতীয় কর্মসূচী। আর সুবিধা বঞ্চিত হয়ে অধিক দামে রবি শস্যাদী কিনছেন এলাকার ২ লক্ষ সাধারণ ক্রেতা। নাইক্ষ্যংছড়ি কৃষি অফিস সূত্র জানায়, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় মোট আবাদ যোগ্য জমির পরিমান ৮ হাজার ৩ শত হেক্টর। এর মধ্যে আগাম আবাদ করা হয় ৮৬ হেক্টর। এ সব জমিতে চাষ হয়েছে সীম,বেগুন,মূলা,শশা, ঢ়েড়শ,আলু,লাল শাক,করলা,মিষ্টি কূমড়া ,পুঁই শাক,পালং শাকসহ নানা জাতের তরিতরকারি। অবশিষ্ট জমির একটি বিরাট অংশ নানা কৌশলে টোব্যাকো কোম্পানীর লোকজন ফাদঁ বসিয়ে তামাক ক্ষেতের জন্যে বাগিয়ে নেয়। আর বাকী ৪ শ’ ২০ হেক্টর জমিতে রবি মৌসূমের চাষের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়। গত ২০১৩ সালেও অনুরূপ সংখ্যক লক্ষ্য মাত্রা পুরণ করেছিল নাইক্ষ্যংছড়ির এ অফিস। ধার্য লক্ষ্যমাত্রার এ চাষের জমিতেও মৌসূমের এসব তরিতরকারী চাষ করা হবে। অপর আর একটি সূত্র দাবী করেন, রবি মৌসূমের অবশিষ্ট জমিতে মৌসূমী তরিতরকারী ও শাক-সবজির বদলে কেন-ই বা তামাক চাষ করা হচ্ছে তা বলতে গেলে তামাক কোম্পানীদেরই সফলতা। এখানে কৃষি অফিসের নানা দূর্বলতা রয়েছে বলেও জানালেন এ সব সচেতন মহল। তারা আরো জানান, বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ি ও আশপাশের এলাকা গুলোতে অন্তত ২ শ’ এর অধিক লোক লাগিয়ে দিয়ে বৃটিশ স্টাইলে রবি শস্যের চাষিদের অধিক লাভ ও নানা লোভÑ লালসা দেখিয়ে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন কোম্পানীর এ সব লোকজন। ্এতে মার খাচ্ছে দেশীয় ফসল। এসব লোকজনের ধারনা, চলতি মৌসুমে যেভাবে শশা আর মূলা সহ সবজি চাষ করে কৃষকরা লাখপতি বনে গিয়েছে সে স্টাইলে যদি অপরাপর জমিতেও এ সবজি চাষ করা হয় বা হতো- তা হলে তামাক চাষ কেন ? যে তামাক চাষ একদিকে পরিবেশ নষ্ট করে অপর দিকে দেশের খাদ্য যোগানে বড় বাধা সৃষ্টি করে। পরিবেশ নষ্টের মধ্যে নিকোটিনের আগ্রাসনে সর্বশেষ ক্যান্সার সৃষ্টি করে আর খাদ্য যোগানে বাধার কারনে স্থানীয় ও জেলা শহরে সবজি বাজারে আগুন জ্বালিয়ে মানুষকে মারাত্বকভাবে হয়রানী করা হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে তামাক চাষ জাতিকে কষ্ট দেয়, প্রজন্মকে ধংস করে। যদিও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কিছুই বলতে রাজি হননি। তবে টোব্যাকো কোম্পানীর সব চাইতে বড় দাবিদার বৃটিশ -আমেরিকা টোবাকোর ম্যানেজার হাফিজুর রহমান জানান, আসলে তারা পরিত্যক্ত জমিতেই এ তামাক চাষ করে আসছে। এ কারনে এ তামাক চাষ এখানকার কৃষকদের জন্যে বোনাস ফসল হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। তার পরেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর তারা অন্তত ২০ শতাংশ তামাক চাষ কমিয়ে ফেলেছে। অনুরূপ চাষী কমানোর কথা বলেছেন ঢাকা টোব্যাকোর এক কর্মকর্তাও। তিনিও বলেছেন চলতি সনে তারা লক্ষমাত্রা ধরেছেন ১৫ শত কানি। গত বছরও তারা সম-পরিমান জমিতে তামাক চাষ করেছিলেন। তার দেয়া তথ্য মতে নাইক্ষ্যংছড়িতে টোব্যাকো কোম্পানীর সংখ্যা স্থায়ী হলো: ৩ টি। আর অস্থায়ী হলো আরো ৩টি। স্থায়ী কোম্পানী গুলো হলো বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাাকো, ঢাকা টোব্যাকো এবং আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানী। আর অস্থায়ী ভাবে যারা এখান থেকে তামাক কেনে থাকেন তারা হলো:এন.কে (নাছির কোম্পানী), ভরসা কোম্পানী ও হাই-ফাই কোম্পানী। একদল তামাক চাষির অভিযোগ-স্থায়ী ও অস্থায়ী কোম্পানী গুলো বৃটিশ সৃজিত ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর নীল চাষের আদলে তামাক চাষীদেরকে অত্যাচার নির্যাতন করেই তাদের পাওনা আদায় করে নেয় তারা। আর কোম্পানীদের পক্ষ থেকে যে সব তামাক চাষ উপকরন দেয়া হয়,তাতে কয়েক গুনলাভে এ উপকরনের মূল্যও আদায় করে নেয় এ কোম্পানী গুলো। অবশ্য কোম্পানীর লোকজন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। আর কোম্পানীরা তামাক চাষে সব কিছু দিলেও ইউরিয়া সার দেন না। এ কারনে তামাক চাষিরা সরকারের ডিলারদের কাছ থেকে ১১ শ’ টাকা থেকে ১৫শ টাকায় বস্তা প্রতি ইউরিয়া সার সংগ্রহ করে তামাকে ব্যবহার করেন। রবি মৌসূমের সবজি চাষি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ,মোহাম্মদ ইউনূছ সহ অনেকেই অভিযোগ করেন, তামাক চাষিরা তাদের বরাদ্দের ইউরিয়া সার সহ অধিকাংশ সরকারী বরাদ্দের সার তামাক চাষে ব্যবহার করেন, যা দেখার কেউ নেই। কেননা এ-তো প্রকাশ্যে এবং দিন দুপুরেই করা হচ্ছে। তারা এও দাবী করেন, চলতি নভেম্বর মাসে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কৃষকদের জন্যে সরকারী বরাদ্দের ১ শ’ (একশ টন) টন সারের অধিকাংশই নাইক্ষ্যংছড়ি ও পার্শ্ববর্তী কচ্ছপিয়া,গর্জনিয়া সহ এলাকার তামাক চাষিদের বিক্রি করে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে ডিলার ও খচরা বিক্রেতারা। এ জন্যে তারা নানা কৌশল খাটিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন। তারা আরো দাবী করেন,তামাক কোম্পানীরা দেশের আইনও তামাক চাষের চুক্তি লঙ্গন করে পরিত্যক্ত জমির পরিবর্তে সবজি বা অন্যান্য রবি চাষের জন্যে অত্যাধিক উপযোগী খাল ও নদী-নালার তীর-চর বা আশপাশের উর্বর জমিতে তামাক চাষে উৎসাহিত করে চাষিদের। যেন, তামাকের ফলন ভাল হয়। লাভ ভাল করা যায়। এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু শাফায়াত মো: শাহেদুল ইসলাম জানান, তামাকের ক্ষতির বিষয়, চুক্তি লঙ্গনের বিষয়, ইউরিয়া সারের বিষয় সহ অন্যায় সব বিষয়ে তিনি কাউকেই ছাড় দেবেন না। সরকারী সার তামাক ক্ষেতে গেলেই আইনী ব্যবস্থা। সারের বিষয়য়ে তিনি সাংবাদিকদেরও সহযোগিতা কামনা করেন। 

Source: dainikcoxsbazar.net,3 nov 2014

About Tobacco Industry Watch

House 6 (3rd Floor, East Side), Main Road 3, Block A, Section 11, Mirpur, Dhaka-1216
Tel: +88-02-9005553, Fax : +88-02-8060751,
URL : www.tobaccoindustrywatchbd.org, Skype ID: progga.bd

Email: progga.bd@gmail.com, info@tobaccoindustrywatchbd.org