ছবি সতর্কতায় গড়িমসি তামাক কোম্পানিগুলোর
আগামী বছরের মার্চ থেকে তামাকজাত পণ্যের সব প্যাকেটে পিকটোরিয়াল ওয়ার্রিং বা সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা দেওয়ার কথা আইনে বলা হলেও এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই তামাক কোম্পানিগুলো। সিগারেটের প্যাকেটে সতর্কবার্তা প্রদর্শনসহ সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন এখনও সন্তোষজনক নয়। বিষয়টিকে জনস্বাস্থ্যের জন্য বিরাট হুমকি হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, কোনওভাবেই যেন তামাক কোম্পানিগুলো আইন ভাঙতে না পারে সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। কারণ, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫৭ হাজার মানুষ তামাকের কারণে মারা যায়। পঙ্গু হয় ৩ লাখ ৮২ হাজার ও ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয় তামাকজনিত রোগের চিকিৎসাখাতে।
উল্লেখ্য, সরকার ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (সংশোধীত ২০১৩) এবং এ সংক্রান্ত বিধিমালা হয়েছে ২০১৫ সালে।
সেখানে বলা হয়েছে, “ তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট, মোড়ক, কার্টন বা কৌটার উভয় পাশে মূল প্রদর্শনী তল বা যে সকল প্যাকেটে দুটি প্রধান পার্শ্ব নেই সেসব প্যাকেটের মূল প্রদর্শনী তলের উপরিভাগে অনূন্য শতকরা পঞ্চাশ ভাগ পরিমাণ স্থান জুড়ে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি সম্পর্কে, রঙিন ছবি ও লেখা সম্বলিত, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সতর্কবাণী, বিধি দ্বারা নির্ধাতির পদ্ধতিতে, বাংলায় মূদ্রণ করতে হবে।”
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিশ্বস্ত সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানায়, ‘তামাক কোম্পানিগুলো সতর্কবার্তা সংক্রান্ত কোনও চিঠি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পায়নি বলে দাবি করে। অথচ সরকারি নিয়ম হচ্ছে, গেজেট প্রকাশিত হবার দিন থেকে এটি সবাই জানে বলে ধরে নিতে হবে। এরপরও তারা যখন বলেছে তারা চিঠি পায়নি তখন জাতীয় রাজস্ববোর্ড থেকে তাদের সবার ঠিকানা নিয়ে চিঠি দিয়েছি। সিগারেট, বিড়ি, জর্দা-গুল কোম্পানিসহ মোট ২০০ কোম্পানিকে আমরা চিঠি দিয়েছি।কোম্পানি এখন বলতে চাচ্ছে, ব্যান্ডরোল দিলে ওপরের অংশ কিছুটা ঢেকে যাবে, তাই সচিত্র বার্তা প্যাকেটের নিচের অংশে দেওয়ার জন্য।আমরা তাদের পরামর্শ দিয়েছি, ব্যান্ডরোল সাইডে লাগানোর জন্য। কিন্তু এখানেও তাদের বাহানা। ব্যান্ডরোল সাইডে দিতে যে মেশিন দরকার সেটি তাদের নেই এবং এর জন্য তাদের অনেক টাকা খরচ হবে। কিন্তু বিষয় হলো, সরকার আইন জারি করেছে, সেটা বাস্তবায়ন করতে যদি টাকা খরচ হয় সেটা সরকারের দেখার বিষয় না।’
ধূমপানের ভয়াবহ ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রণয়ন করেছে আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি এফসিটিসির প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ। আন্তর্জাতিক চুক্তিটি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। সরকার ২০১৩ সালে এফসিটিসির আলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি আরও কার্যকর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশোধন করেছে।
চুক্তিতে কার্যকরভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য সব প্রকার প্রচারণা কার্যক্রম নিষিদ্ধ, সব ধরনের পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহন ধূমপানমুক্ত করা, সিগারেটসহ তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কীকরণ প্রদান, তামাক চাষীদের বিকল্প ফসল উৎপাদনে সক্রিয় সহযোগিতা, তামাকজাত দ্রব্যের ওপর উচ্চহারে কর আরোপ ও মূল্য বৃদ্ধি এসব অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তামাক কোম্পানিগুলোর এ ধরনের গড়িমসির বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে)-এর গ্রান্ট ম্যানেজার ডা. মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আইন মেনেই ব্যান্ডরোল এবং সচিত্র সতর্কবার্তা দেওয়া সম্ভব। ইচ্ছে করে দেরি করার জন্য তামাক কোম্পানিগুলো ঝামেলা সৃষ্টি করছে। এটা হবে না, ওটা হবে না তারা যদিও বলে যাচ্ছে কিন্তু আসলে সবই সম্ভব।
সিগারেট বা অন্যান্য তামাকের ভয়াবহতায় বিশ্বের অনেক দেশেই তামাকজাত পণ্যে প্যাকেটে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা সংযোজন করেছে সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানরা। ভারতে সিগারেটের প্যাকেটের মোড়কের সামনে এবং পেছনে ৮৫ শতাংশ স্থান জুড়ে সচিত্র সতর্কবার্তা সংযোজন করার আইন হয়েছে। নেপালে হয়েছে ৯০ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৮৫ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় প্যাকেটের সামনে ৭৫ শতাংশ এবং পেছনে ৯০ শতাংশ, শ্রীলংকায় সামনে পেছনে ৮০ শতাংশ। এমনকি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত ২৮টি দেশও সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে ৬৫ শতাংশ স্থান জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্যবার্তা জুড়ে দিয়েছে।
এদিকে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞার মতে, রাষ্ট্রের কাছে জনস্বাস্থ্যের অগ্রাধিকার সবার ওপরে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা করতেই সরকার এ আইন করেছে এবং কোম্পানি যত বড়ই হোক না কেন, আইন অনুযায়ী পিকটোরিয়াল ওয়ার্নিং মানতে বাধ্য।
এ প্রসঙ্গে জানতে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর (বিএটি) কাছে বেশ ক’বার ফোন করা হলেও কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
Source: bangla tribune,ডিসেম্বর ১৭, ২০১৫