ধূমপানে ক্ষতির ছবিসহ সতর্কবাণী ছাপাতে তামাক কোম্পানির টালবাহানা
তামাকজাত পণ্যের প্যাকেটে ধুমপানে ক্ষতির ছবিসহ সতর্কবাণী ছাপাতে টালাবাহানা শুরু করেছে তামাক কোম্পানীগুলো। নির্ধারিত সময়ে তারা অনীহা প্রকাশ করেছে বলেও জানিয়েছে তামাকবিরোধী সাংবাদিকদের সংগঠন এন্টি টোব্যাকে মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা)। এর সূত্র ধরে ধুমপানের ভয়াবহ ক্ষতি এবং তামাক কোম্পানীগুলোর নেতিবাচক অবস্থানে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইন্টারপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। এ বিষয়ে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে মোহাম্মদ নাসিমকে একটি চিঠি দিয়েছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সিগারেট বা অন্যান্য তামাকের ভয়াবহতায় বিশ্বের ৭৭টি দেশে তামাকজাত পণ্যে প্যাকেটে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা সংযোজন করেছে সরকার। ভারতে সিগারেটের প্যাকেটের মোড়কের সামনে এবং পেছনে ৮৫ শতাংশ, নেপালে ৯০ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৮৫ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় প্যাকেটের সামনে ৭৫ শতাংশ এবং পেছনে ৯০ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় সামনে পেছনে ৮০ শতাংশ। এমনকি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত ২৮টি দেশও সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে ৬৫ শতাংশ স্থানজুড়ে ছবিসহ স্বাস্থ্যবার্তা জুড়ে দিয়েছে।
তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো বলছে, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে একজন ধূমপায়ী সিগারেট কেনা ও ব্যবহার করার সময় দিনে ২০ বার এবং বছরে সাত হাজার তিনশ’ বার সিগারেটের প্যাকেট দেখে। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে; সিঙ্গাপুরে তামাকজাত পণ্যের প্যাকেটে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা সংযোজনের পর ২৮ শতাংশ ধূমপায়ী বলেছেন যে তারা ধূমপানের পরিমাণ কমিয়েছে।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৩ অনুসারে চলতি বছরের ১৯ মার্চের মধ্যে সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্যের প্যাকেটে রঙিন ছবিসহ সতর্কবাণী ছাপতে হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ছবিসহ সতর্কবাণী ছাপানোয় অনীহা দেখিয়ে নানা যুক্তি তুলে ধরে টালবাহানা শুরু করেছে তামাক কোম্পানিগুলো।
এ পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য বিবেচনা করে ধুমপান বিরোধী কঠোর অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে দেয়া চিঠিতে সাবের হোসেন চৌধুরী লিখেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৫৬তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সই করা ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশ সরকার ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন, ব্যবহার, কেনাবেচা ও বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রণীত আইনটি বাস্তবায়নের জন্য পরে ২০১৫ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা পাস হয়।
গত বছরের ১৯ মার্চ কার্যকর হওয়া আইনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চের মধ্যে সিগারেটসহ সব তামাকজাত পণ্যের প্যাকেট, মোড়ক, কার্টন বা কৌটার দুই পাশের অর্ধেকজুড়ে ওপরের অংশে ওই পণ্য ব্যবহারে হওয়া ক্ষতির রঙিন ছবি ও লেখাসহ সতর্কবার্তা ছাপানো বাধ্যতামূলক। কিন্তু বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো ওইসব সতর্কবাণী ছাপাতে অনীহা দেখাচ্ছে। আইনটি না মানার জন্য তারা নানা অজুহাত দেখাচ্ছে।
তামাক কোম্পানীগুলো বলছে- যেহেতু আইন অনুযায়ী সচিত্র সতর্কবাণী এমনভাবে মুদ্রণ করতে হবে যাতে তা স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল দ্বারা ঢেকে না যায়, সেহেতু ছবিযুক্ত সতর্কবাণী প্যাকেটের উপরিভাগে পঞ্চাশ শতাংশের পরিবর্তে নিচে মুদ্রণ করতে হবে।
চিঠিতে কোম্পানিগুলোর দেখানো ওই সমস্যার সমাধান দিয়ে তিনি বলেছেন, ২০১১ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল ছাড়া প্যাকেট বাজারজাত করা যাবে না। সুতরাং সামনে-পেছনে লাগানোর পরিবর্তে একপাশ দিয়ে স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল লাগালে আর সতর্কবাণী ঢাকবে না। এর একটি নমুনা ছবিও তিনি চিঠির সঙ্গে পাঠিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে।
তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০০৪ সালের তথ্য অনুসারে প্রতিবছর তামাকজাতীয় দ্রব্যের কারণে আমাদের দেশে মারা যায় ৫৭ হাজার মানুষ। পঙ্গু হয় আরো ৩ লাখ ৮২ হাজার। সর্বশেষ তথ্য প্রকাশিত হলে সংখ্যাটি হয়তো আরো বেশি হতে পারে। তাই ঠিক সময়ে ছবিযুক্ত সতর্কবাণী ছাপানো শুরু করা না গেলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তামাকের ছোবল থেকে রক্ষা করা যাবে না বলে এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন তিনি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের কো-অর্ডিনেটর ও যুগ্ম সচিব রুহুল কুদ্দুস বলেন, আশা করছি ১৯ মার্চের মধ্যেই সব তামাকজাত পণ্যের প্যাকেটে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা দেয়া সম্ভব হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে যথেষ্ঠ আন্তরিক। তামাকের ভয়াবহতা অনুধাবন করেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন আগামী বছর থেকে ধূমপায়ীরা মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাবে না। শুধু তাই নয়, মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেতে হলে শিক্ষার্থী যে অধূমপায়ী এর প্রত্যয়নপত্রও জমা দিতে হবে।
Source: bhorerkagoj, ১৫ জানুয়ারি ২০১৬