১৯ মার্চের মধ্যে তামাক পণ্যের প্যাকেটে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্ক বার্তা
আইন অনুযায়ী ১৯ মার্চের মধ্যে সিগারেটসহ তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটের উপরের অংশে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্ক বার্তা দেয়ার বিধান থাকলেও এর বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা কাটছে না তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতাদের। এ বিষয়ে 'সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে' স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এমন দাবি করলেও আইন মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে অনেকটাই নিশ্চুপ। এ সংশয় থেকেই সকল তামাকপণ্যের প্যাকেটে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্ক বার্তা বাস্তবায়নের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো। ইতোমধ্যেই সিগারেটের প্যাকেটের নিচের অংশে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা দিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পোস্টারিং করেছে তামাক কোম্পানিগুলো।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে; তামাক কোম্পানির দাবি মেনে নিয়ে তামাক পণ্যের প্যাকেটের নিচের অংশের ৫০ শতাংশ জায়গায় ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্ক বার্তা দেয়ার বিধান রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন আইনমন্ত্রী। গতকাল এ সিদ্ধান্তের পরপরই ব্যক্তিগত সাত দিনের সফরে বিদেশ যান আইনমন্ত্রী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান; এ প্রসঙ্গে কথা বলতে চান না বলেই আইনমন্ত্রীর এই বিদেশ সফর। আইন অনুযায়ী ১৯ মার্চ তামাক পণ্যের প্যাকেটের উপরের অংশে ৫০ শতাংশ জায়গা জুড়ে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্ক বার্তা দেয়ার ডেড লাইন শেষ হচ্ছে। আর মন্ত্রী দেশে ফিরবেন ২০ মার্চ। আইনমন্ত্রীর স্বাক্ষর করা ফাইল এখন স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে শনিবারও তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর আয়োজনে এক আলোচনা সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানিয়েছেন; আইন অনুযায়ী ১৯ মার্চের মধ্যেই তামাক পণ্যের প্যাকেটের উপরিভাগে ৫০ শতাংশ জায়গা জুড়ে ছবিসহ সতর্কবাণী আসবে। এই বার্তা বিভিন্ন স্তরে পেঁৗছে দেয়ার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হবে। তবে এ ক্ষেত্রে এবং তামাক নিয়ন্ত্রণে অর্থ, বাণিজ্য এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও সহযোগিতা চান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
১৯ মার্চের মধ্যে সকল তামাকপণ্যের প্যাকেটে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্ক বার্তা বাস্তবায়নের দাবিতে আজ থেকে তিন দিনব্যাপী রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রোডশো'র আয়োজন করেছে তামাকবিরোধী ১২টি সংগঠন। এসব সংগঠনগুলো হলো; ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহসানিয়া মিশন, এসিডি, ইপসা, সীমান্তিক, উবিনীগ, ইসি বাংলাদেশ, ডবিস্নউবিবি ট্রাস্ট, নাটাব, প্রত্যাশা, এইড ফাউন্ডেশন ও প্রজ্ঞা। রোডশো চলবে ১৬ মার্চ বুধবার পর্যন্ত। রোডশোর অংশ হিসেবে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার নমুনাসম্বলিত পাঁচটি ট্রাক মিউজিক্যাল কনসার্টসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থান উত্তরা, গুলশান, মিরপুর, আগারগাঁও, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কাকরাইল, আজিমপুর, বঙ্গবাজার মার্কেট ও গুলিস্থান এলাকা প্রদক্ষিণ করবে। এ সময় সচিত্র সতর্কবাণী সংক্রান্ত লিফলেট বিতরণ করা হবে। রোডশোর শেষ দিন বুধবার বেলা ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে রোডশোর সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।
তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে; বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে একজন ধূমপায়ী সিগারেট কেনা ও ব্যবহার করার সময় দিনে ২০ বার এবং বছরে সাত হাজার তিনশ বার সিগারেটের প্যাকেট দেখে। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে; সিঙ্গাপুরে তামাকজাত পণ্যের প্যাকেটে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্ক বার্তা সংযোজনের পর ২৮ শতাংশ ধূমপায়ী বলেছেন যে তারা ধূমপানের পরিমাণ কমিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (সংশোধীত ২০১৩) এবং এ সংক্রান্ত বিধিমালা হয়েছে ২০১৫ সালে। সেখানে বলা হয়েছে, 'তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট, মোড়ক, কার্টন বা কৌটার উভয় পাশে মূল প্রদর্শনী তল বা যে সকল প্যাকেটে দুটি প্রধান পার্শ্ব নেই সেসব প্যাকেটের মূল প্রদর্শনী তলের উপরিভাগে অনূ্যন শতকরা ৫০ শতাংশ স্থান জুড়ে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি সম্পর্কে, রঙিন ছবি ও লেখা সম্বলিত, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সতর্কবাণী, বিধি দ্বারা নির্ধাতির পদ্ধতিতে, বাংলায় মুদ্রণ করতে হবে।'
বিধিমালা অনুযায়ী ধূমপানে ব্যবহৃত তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে সাতটি এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে দুটি ছবিসহ সকর্ত বার্তা থাকতে হবে। ধূমপানে ব্যবহৃত তামাকজাত পণ্যের ক্ষেত্রে যেসব সকর্ত বার্তা থাকছে সেগুলো হলো; ধূমপানের কারণে গলায় ও ফুসফুসে ক্যান্সার হয়, ধূমপানের কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয়, ধূমপানের কারণে স্ট্রোক হয়, ধূমপানের কারণে হৃদরোগ হয়, ধূমপান গর্ভের সন্তানের মৃত্যু ঘটায়, পরোক্ষ ধূমপানের কারণে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হয়। আর ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্যের ক্ষেত্রে থাকছে তামাকজাত দ্রব্য সেবনে মুখে ও গলায় ক্যান্সার হয় এবং তামাকজাত দ্রব্য সেবনে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হয়।
Source: সংবাদ ,14 March,2016