বিক্রেতার জন্য সিগারেট কোম্পানির ‘বার্তা’ ঝুলছে ‘বিজ্ঞাপনের মতো’
কারওয়ান বাজারে একটি চায়ের দোকানে লিফলেট ধরনের একটি নোটিশ ঝোলানো। তাতে লেখা,
‘প্রিয় বিক্রেতাবন্ধু,
ধূমপায়ীর চয়েসকে কমপ্লিমেন্ট জানাতে ... নিয়ে এসেছে আকর্ষণীয় লুক অ্যান্ড ফিলের নতুন প্যাক, সেই চিরচেনা স্বাদে। তাই এখন থেকে সঙ্গে রাখুন ... এর নিউ প্যাক এবং আপনার ব্যবসায়িক সমৃদ্ধি বাড়িয়ে তুলুন।
ধন্যবাদান্তে
...’
একটি সিগারেটের ব্র্যান্ড সম্পর্কে এভাবে লিখে দোকানে টাঙানো হয়েছে। যে পাশে লেখা, তার বিপরীত পাশে তিনটি সিগারেটের প্যাকেটের নকশাও যুক্ত করা।
বাংলাদেশের আইনে আছে, তামাকের ব্যবহার প্রবর্ধনের উদ্দেশ্যে যেকোনো ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না। এ ছাড়া তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো বলছে, এটা একধরনের পরোক্ষ বিজ্ঞাপন, যা আইনের লঙ্ঘন।
যদিও সিগারেট ব্র্যান্ডের পরিবেশনকারী সংস্থা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ বলছে, তারা ব্যবসায়িক যোগাযোগের অংশ হিসেবে বিক্রেতাকে জানানোর জন্য দিয়েছে এবং এটা বিজ্ঞাপন নয়।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫–এ বলা আছে, প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়, বাংলাদেশে প্রকাশিত কোনো বই, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ডে বা অন্য কোনোভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলেও যেকোনো উপায়ে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা নিষিদ্ধ।
আইনের ব্যাখ্যায় বলা আছে, তামাক পণ্যের বিজ্ঞাপন বলতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো তামাকজাত দ্রব্য বা তামাকের ব্যবহার প্রবর্ধনের উদ্দেশ্যে যেকোনো ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করা।
এর শাস্তি হিসেবে আইনে বলা আছে, আইনভঙ্গকারী অনূর্ধ্ব তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
যে দোকানে ওই লিফলেট ধরনের নোটিশটি ঝুলিয়ে রাখা, তার দোকানিকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিগারেট কোম্পানি ঝুলাইয়া দিয়া গেছে।’ আইনের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।
যে সিগারেট ব্র্যান্ডের বিষয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তার পরিবেশনকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটির হেড অব এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স শেখ শাবাব আহমেদ এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেটা দেওয়া হয়েছে, তা কেবলমাত্র বিক্রেতার জন্য। এটা আমাদের ব্যবসায়িক যোগাযোগের অংশ।
কোনো বিজ্ঞাপন বা ধূমপায়ীকে কেন্দ্র করে করা হয়নি। আইনে বলা আছে, বিজ্ঞাপন করা যাবে না। এটা বিজ্ঞাপন নয়। বিক্রেতাকে জানানোর জন্য যে নতুন প্যাকেটের নকশার পরিবর্তন হয়েছে।’
দোকানে ঝুলিয়ে রাখার বিষয়ে বলেন, ‘ওটা রিটেইলার করে থাকতে পারেন। আমরা ঝুলাইনি। আমরা চিঠি দিয়েছি। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং আইন ভাঙিনি।’
তবে আইন লঙ্ঘন হয়েছে বলে জানান তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আইনে স্পষ্ট করে বলা আছে, ব্যবসায়িক প্রবর্ধনের জন্য যেকোনো উপায়ে কোনো কার্যক্রম চালানো যাবে না। তিনি আরও বলেন, এটাও তাদের প্রচারের একধরনের কৌশল। তারা যে আকারে এবং যেভাবে নকশা করে সাজিয়েছে, সেটাই নিষেধ। এটা তারা করতে পারে না। এটা সম্পূর্ণভাবে আইনের লঙ্ঘন। ওটা চিঠির ফরম্যাট নয়। ওটা করাই হয়েছে ঝুলিয়ে রাখার জন্য। এটা একটা পরোক্ষ বিজ্ঞাপন।
আইনের বিষয়ে এ বি এম জুবায়ের বলেন, ‘আমাদের আইনটি শক্তিশালী কিন্তু প্রয়োগে ঘাটতি আছে।’
জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এগুলোও বিজ্ঞাপনের একধরনের কৌশল। তারা যা লিখেছে, তা চোখের নাগালে রাখার কথা নয়। কিন্তু ওই নোটিশ দোকানে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে এবং ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। এটা আইনের লঙ্ঘন। তিনি আরও বলেন, আইনের প্রয়োগের বিষয়ে তাঁরা পদক্ষেপ নেবেন।
Source: prothom alo, 09 March 2021